আজ শাওনের বন্ধু ফাহিমের এক আত্নীয়র বিয়ে। শাওন আর ফাহিম দুজন বেষ্ট ফ্রেন্ড। ওরা থাকে ঢাকাতে আর বিয়ে সিলেটে। শাওন বিয়েতে আসতেই চায় নি। কারণ দুমাস আগে তার ভালবাসার মানুষটির সাথে তার ব্রেক-আপ হয়েছে। তাই শাওনের মন ভীষণ খারাপ। কিন্তু ফাহিম বেশি জোড় করায় বিয়েতে আসতে হয়ছে। ফাহিম বলেছে নতুন জায়গা, নতুন মানুষের সাথে পরিচিত হলে পুরনো স্মৃতি সহজে ভুলা যায়। তার উপর বেষ্ট ফ্রেন্ডের অনুরোধ না রেখে পারা যায় না।
তাই প্রচন্ড মানসিক চাপ আর ভালবাসার মানুষটির পুরনো স্মৃতিকে সঙ্গে নিয়ে শাওন ফাহিমের বিয়েতে আসলো। বিয়ের অনুষ্টানে প্রচুর হৈ-হুল্লোড় হচ্ছে। গান-বাজনা হচ্ছে। কিন্তু শাওন বিয়ের সেন্টারের এক কোণায় বসে আছে নিরবে। তার চারিপাশে সবাই নতুন মানুষ, অপরিচিত মানুষ। কিন্তু সে কিছুতেই তার ভালবাসার মানুষটিকে ভুলতে পারছেনা। তার চোখে জল টলটল করছে। যেন আরেটু হলেই চোখ হতে অশ্রু গড়িয়ে পড়বে। তার কানে অনবরত বেজেই চলছে তার ভালবাসার মানুষটির শেষ কথাটি। সেইদিন ছিল বিকেলবেলা, তার ভালবাসার মানুষ রিতা তাকে বলেছিল শুধু কবিতা লিখলেই হয়না, তুমি তোমার কবিতা নিয়ে বাস কর তোমার কল্পনার রাজ্যে কিন্তু আমাকে আমার বাস্তব নিয়ে থাকতে হয়। আমি ঘরের বড় মেয়ে, আমার নিচে রয়েছে আমার আরো ছোট দুটি বোন। আমি চাইনা তোমার সাথে সংসার সাজিয়ে আমার এবং আমার দু'বোনের ভবিষ্যৎ নষ্ট হোক। তারচেয়ে ভাল বাবার পছন্দের ছেলেকে বিয়ে করা। ছেলে কিছুদিন পর আমেরিকা চলে যাবে। বিয়ের পর তার সাথে আমিও চলে যাবো আমেরিকায়। কিন্তু তোমাকে বিয়ে আমার পক্ষে সম্ভব না। শোন, কবিতা লিখে হয়ত মানসিক প্রশান্তি পাওয়া যায় কিন্তু সংসার চালানো যায় না।
এইসব পুরনো স্মৃতির মধ্যখানে হটাৎ শাওনের ফোন বেজে উঠলো। সে ফোন পকেট থেকে বের করে দেখলো ফাহিমের কল। শাওন কল রিসিভ করার পর ফোনের অন্য প্রান্ত হতে ফাহিম বললো- আরে শাওন কোথায় তুই? বিয়ের ষ্টেজের সামনে আয়। নতুন ভাবিকে দেখে যা। শাওন বললো- হুমম দাঁড়া, আসছি।
শাওন চোখের পানি মুছে ষ্টেজের দিকে এগিয়ে গেল। কাছে গিয়ে দেখতে পেলো বরের পাশে কনের সাজে বসে আছে তার ভালবাসার মানুষটি। শাওনের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। ফাহিম তখন তার নব্য বধূ রিতার সাথে শাওনের পরিচয় করিয়ে দিলো। রিতা ভাবী, এই হল শাওন আমার বন্ধু। সে ভাল কবিতা লিখতে পারে। কিন্তু দু'মাস আগে একটা বাজে মেয়ে ওকে কি যেন বলেছে তারপর থেকেই এখন আর কবিতা লিখে না। শাওন তখন আবেগপূর্ণ কন্ঠে উত্তর দিলো- আমি যাকে আমার কবিতার মধ্যে লুকিয়ে রাখতাম, যাকে আমি আমার কবিতার মাঝে খোঁজে পেতাম, সেই প্রিয় ভালবাসার মানুষটি চলে যাবার সময় আমাকে বলে গিয়েছিল কবিতা লিখে হয়ত মানসিক প্রশান্তি পাওয়া যায় কিন্তু সংসার চালানো যায় না। তাই যে কবিতার কারণে আমার ভালবাসার মানুষ আমাকে ত্যাগ করে অন্যের হাতে হাত রাখলো সেই কবিতাকে আমি আমার জীবন হতে চিরতরে বিদায় জানাই।
(সমাপ্ত)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন