মঙ্গলবার, ১৩ মে, ২০১৪

"দড়ি -The Rope" আমার লেখা একটি গল্প, জানি না ভালো লাগবে কী-না তবুও শেয়ার করলাম

"দড়ি -The Rope"


জনি এবং আনিকা ট্রেনে করে কক্সবাজার যাচ্ছে। জনির শুশুর জনাব আশরাফ বলেছিলেন ট্রেন ষ্টেশনে রফিক নামে একজন লোক আসবে তাদের রিসিভ করার জন্য। কক্সবাজারে জনাব আশরাফের বাঙ্গলো বাড়ি আছে। রফিক হল এই বাঙ্গলো বাড়ির একজন কেয়ার টেকার। কিন্তু ট্রেন যখন রাত সাড়ে বারোটায় ষ্টেশনে পৌঁছলো তখন তাদের রিসিভ করার জন্যে কেউ এলো না। 

কক্সবাজার জনি ও আনিকার জন্য নতুন শহর। এখানে তাদের পরিচিত কেউ নেই, তার উপর এখন রাত। রাতের বেলা অপরিচিত শহর মোটেই নিরাপদ নয়। তাই যথাসময়ে রফিক নামক লোকটি-কে না পেয়ে তারা দুজন কিছুটা উদ্বিগ্ন হয়ে পরলো। হটাৎ কে যেন পিছন দিক হতে জনির কাঁধে হাত দিলো। জনি পিছনে মাথা ঘুরিয়ে দেখলো তিনি একজন বৃদ্ধলোক। লোকটি জনিকে জিজ্ঞেস করলো তুমি নিশ্চিয় জনি। 

জনি ইতিবাচক উত্তর দিয়ে লোকটির পরিচয় জানতে চাইলো। লোকটি বললো উনার নাম মোখলিছ আলী, তিনি রফিকের পিতা। তিনি আগে কখনো জনি ও আনিকাকে দেখেননি তাই ষ্টেশনে তাদের খোঁজে পেতে উনার দেরি হয়ে গেছে। 

লোকটি কথা বেশি না বাড়িয়ে জনি ও আনিকাকে বাঙ্গলো বাড়িতে নিয়ে গেল। বিড়াট বড় বাঙ্গলো বাড়ি অথচ এখানে লোকটি একা কাজ করে। লোকটি জানি ও আনিকাকে তাদের রুম দেখিয়ে দিল। রাতের খাবার শেষে নব-দম্পতি ঘুমাতে গেলো। দীর্ঘ জার্নির কারণে দুজন ভীষণ ক্লান্ত। ক্লান্ত শরীরে ঘুম তারাতারি চলে আসলো।

মাঝরাতে দরজায় নাড়া দেয়ার শব্দ হল। অভ্যাসবশত জনির ঘুম হাল্কা শব্দতেই ভেংগে যায়। সে দরজার পাশে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো, কে, কে নাড়া দিচ্ছে? দরজার ওপাশ থেকে উত্তর আসলো আমি রফিকের পিতা মোখলিছ আলী । জনি দরজা খোলে মোখলিছ আলীকে জিজ্ঞেস করলো এত রাতে আপনি এখানে, কিছু বলবেন? মোখলিছ আলী উত্তরে বললেন বিছানার তলায় একটা দড়ি আছে তিনি সেই দড়িটি নিতে এসেছেন। জনি উনাকে বিছানার তলা হতে দড়ি এনে দিলো। উনি দড়ি নিয়ে চলে গেলেন।

পরদিন সকালবেলা জনি ও আনিকা ঘুম থেকে উঠে সাড়া বাঙ্গলোতে মোখলিছ আলী-কে খোঁজে পেলো না। জনি ড্রাইনিং রুমে টেবিলে নাস্তা সাজানো পেলো। এখানে আনিকা একটি চিরকুট পেল। চিরকুটে মোখলিছ আলী লিখেছেন বাঙ্গলোতে উনার ডিউটি শুধু রাতের বেলা, দিনে বাঙ্গলোতে উনার কোন কাজ থাকেনা তাই উনি উনার বাড়িতে চলে গেছেন । সন্ধ্যার পর বাঙ্গলোতে আসবেন।

জনি-আনিকা নাস্তা শেষে সমুদ্র উপভোগের জন্য সমুদ্র সৈকততে বেড়িয়ে পরলো। রাত্রিবেলা তারা বাড়ি ফিরলো। মোখলিছ আলী রাতের খাবার টেবিলে সাজিয়ে দিলো। রাতের খাবার খেয়ে তারা দুজন ঘুমাতে গেলে গত রাতের মত আজকেও মাঝরাতে মোখলিছ আলী রুমের দড়জায় নাড়া দিলেন। জনি দরজা খোললো। মোখলিছ আলী জনিকে বিছানার তলা হতে দড়ি এনে দিতে বললেন। জনি কিছুটা বিরক্তিকরভাবে দড়িটি এনে দিল। মোখলিছ আলী দড়ি নিয়ে চলে গেলেন।

গতদিনের মতন জনি-আনিকা ঘুম থেকে উঠে মোখলিছ আলীকে খোঁজে পেলনা। কিন্তু মোখলিছ আলী আগের দিনের মতন টেবিলে নাস্তা এবং চিরকুট রেখে গেছেন। চিরকুটে লেখা সন্ধ্যা পর উনি বাঙ্গলোতে ফিরবেন।

নাস্তা শেষে জনি ও আনিকা সাগরের পথে বেড়িয়ে পরলো। সূর্যাস্ত উপভোগের পর রাত্রিবেলা তারা বাঙ্গলোতে ফিরে এল। তারা রাতের খাবার বাহিরে খেয়ে এসেছে। তাই বাড়িতে ফিরে তারা সারাসরি ঘুমাতে চলে গেল। কক্সবাজারে আজ তাদের তৃতীয় রাত। ঘুমনোর আগে জনি ভাবলো মাঝরাতে মোখলিছ আলী এসে বিরক্ত করবে, তারচেয়ে ভাল হবে ঘুমানোর আগে উনাকে উনার দড়ি দিয়ে আসা। কিন্তু সে বিছানার তলায় কোন দড়ি খোঁজে পেলো না। দড়ি না পেয়ে জনি নিশ্চিন্তভাবে ঘুমিয়ে পরলো, সে ভাবলো হয়ত মোখলিছ আলী আগে থেকেই দড়ি সরিয়ে রেখেছে । 

কিন্তু না, মাঝরাতে দড়জায় নাড়া দেয়ার শব্দ হল। জনি ঘুম থেকে উঠে দরজা খোলে রাগান্বিতভাবে জিজ্ঞেস করলো, কি ব্যাপার মোখলিছ চাচা , দড়ি নিতে এসেছেন নিশ্চিই। মোখলিছ আলী হ্যাঁ বোধক উত্তর দিলো। জনি বললো বিছানার তলায় কোন দড়ি নেই, সে ঘুমানোর আগে খোঁজে দেখেছে। কিন্তু বৃদ্ধ মোখলিছ আলী কোনভাবেই জনির কথা মানতে রাজী নন। তিনি তাকে বিছানা তলা আবার খোঁজে দেখার জন্য অনুরোধ করলেন। জনি নিরুপায় হয়ে বিছানার তলায় আবার দড়ি খোঁজতে গেল। 

কিন্তু আবাক কান্ড। বিছানার তলায় একেবারে সামনে দড়িটি রাখা। অথচ ঘুমাতে যাবার আগে যখন সে দড়িটি খোঁজেছিল তখন সেখানে দড়ি ছিল না। রুমে সে এবং আনিকা ছাড়া তৃতীয় কেউ নেই আর রুমের দরজা ভেতর হতে লক করা, তাই অন্য কারো পক্ষে রুমে ডুকে লুকিয়ে বিছানার তলায় দড়ি রাখা অসম্ভব। তাহলে হটাৎ কি করে বিছানা তলায় দড়ি আসলো। দড়ির তো হাত-পা নেই যে আপনা-আপনি চলে আসবে। জনি মনে মনে এইসব প্রশ্ন নিয়ে ভাবতে লাগলো। বৃদ্ধ মোখলিছ আলী দড়ি নিয়ে চলে গেলেন।

জনি এই সব ভাবতে ভাবতে সিগারেট জ্বালালো এবং অতি আগ্রহে সে জানাতে চাইলো মোখলিছ আলী প্রতিরাতে দড়ি দিয়ে করে কি। খানিকক্ষণ পর জনি রহস্য উদঘাটনের জন্য মোখলিছ আলীর শোবার রুমের দিকে গেল। সেখানে গিয়ে জনি দেখলো ফ্যানের সাথে ঝুলে আছে দড়ি দিয়ে গলায় ফাঁশ লাগানো অবস্থায় মোখলিছ আলীর মৃত দেহ। 

এই অস্বাভাবিক দৃশ্য দেখে জনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। পরে যখন তার জ্ঞান ফিরে তখন সে দেখতে পেলো তার পাশে আনিকা বসে আছে এবং তার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন আনিকার পিতা জনাব আশরাফ ও একজন অপরিচিত মধ্যবয়স্ক একটা ছেলে। ছেলেটি তার পরিচয় দিলো, তার নাম রফিক। সে ষ্টেশনে আসতে পারেনি কারণ সে আশরাফ সাহেবকে না জানিয়ে তার দেশের বাড়িতে চলে গিয়ে ছিল। আর আশরাফ সাহেব বাঙ্গোলর ঠিকানায় টেলিগ্রাম করে জানিয়ে ছিলেন জনি-আনিকার আসার কথা। বাঙ্গলো তখন খালি ছিল। আনিকা তখন রফিককে জিজ্ঞেস করলো তাহলে ঐ  বৃদ্ধ মোখলিছ আলি উনি কে? রফিক উত্তরে বললো মোখলিছ আলী তার পিতা। তিনি এই বাঙ্গলোতে প্রায় ত্রিশ বছর যাবত কেয়ার টেকারের দ্বায়িত্বে কর্মরত ছিলেন। 

বছরখানেক আগে কোন এক অজানা কারণে গভীর রাতে তিনি গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। কিন্তু উনার আত্মার আজো মুক্তি মিলেনি। প্রতি রাতে সন্ধ্যার পর গভীর রাত পর্যন্ত উনার আত্মা এই বাঙ্গলোতে ঘুড়ে-বেড়ায়। বছরখানেক আগে যে রাতের যে প্রহরে উনি আত্মহত্যা করেছিলেন সে প্রহরে প্রতি রাতে উনার আত্মা আত্মহত্যা করে। এবং উনি যে দড়ি দিয়ে গলায় ফাঁস দিয়েছিলেন সে দড়িটি উনার আত্মা প্রতি রাতে খোঁজে বেড়ায়।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন