শনিবার, ৩১ মে, ২০১৪

গল্প "সে একজন কবি ছিল"

আজ শাওনের বন্ধু ফাহিমের এক আত্নীয়র বিয়ে। শাওন আর ফাহিম দুজন বেষ্ট ফ্রেন্ড। ওরা থাকে ঢাকাতে আর বিয়ে সিলেটে। শাওন বিয়েতে আসতেই চায় নি। কারণ দুমাস আগে তার ভালবাসার মানুষটির সাথে তার ব্রেক-আপ হয়েছে। তাই শাওনের মন ভীষণ খারাপ। কিন্তু ফাহিম বেশি জোড় করায় বিয়েতে আসতে হয়ছে। ফাহিম বলেছে নতুন জায়গা, নতুন মানুষের সাথে পরিচিত হলে পুরনো স্মৃতি সহজে ভুলা যায়। তার উপর বেষ্ট ফ্রেন্ডের অনুরোধ না রেখে পারা যায় না।

তাই প্রচন্ড মানসিক চাপ আর ভালবাসার মানুষটির পুরনো স্মৃতিকে সঙ্গে নিয়ে শাওন ফাহিমের বিয়েতে আসলো। বিয়ের অনুষ্টানে প্রচুর হৈ-হুল্লোড় হচ্ছে। গান-বাজনা হচ্ছে। কিন্তু শাওন বিয়ের সেন্টারের এক কোণায় বসে আছে নিরবে। তার চারিপাশে সবাই নতুন মানুষ, অপরিচিত মানুষ। কিন্তু সে কিছুতেই তার ভালবাসার মানুষটিকে ভুলতে পারছেনা। তার চোখে জল টলটল করছে। যেন আরেটু হলেই চোখ হতে অশ্রু গড়িয়ে পড়বে। তার কানে অনবরত বেজেই চলছে তার ভালবাসার মানুষটির শেষ কথাটি। সেইদিন ছিল বিকেলবেলা, তার ভালবাসার মানুষ রিতা তাকে বলেছিল শুধু কবিতা লিখলেই হয়না, তুমি তোমার কবিতা নিয়ে বাস কর তোমার কল্পনার রাজ্যে কিন্তু আমাকে আমার বাস্তব নিয়ে থাকতে হয়। আমি ঘরের বড় মেয়ে, আমার নিচে রয়েছে আমার আরো ছোট দুটি বোন। আমি চাইনা তোমার সাথে সংসার সাজিয়ে আমার এবং আমার দু'বোনের ভবিষ্যৎ নষ্ট হোক। তারচেয়ে ভাল বাবার পছন্দের ছেলেকে বিয়ে করা। ছেলে কিছুদিন পর আমেরিকা চলে যাবে। বিয়ের পর তার সাথে আমিও চলে যাবো আমেরিকায়। কিন্তু তোমাকে বিয়ে আমার পক্ষে সম্ভব না। শোন, কবিতা লিখে হয়ত মানসিক প্রশান্তি পাওয়া যায় কিন্তু সংসার চালানো যায় না।

এইসব পুরনো স্মৃতির মধ্যখানে হটাৎ শাওনের ফোন বেজে উঠলো। সে ফোন পকেট থেকে বের করে দেখলো ফাহিমের কল। শাওন কল রিসিভ করার পর ফোনের অন্য প্রান্ত হতে ফাহিম বললো- আরে শাওন কোথায় তুই? বিয়ের ষ্টেজের সামনে আয়। নতুন ভাবিকে দেখে যা। শাওন বললো- হুমম দাঁড়া, আসছি।

শাওন চোখের পানি মুছে ষ্টেজের দিকে এগিয়ে গেল। কাছে গিয়ে দেখতে পেলো বরের পাশে কনের সাজে বসে আছে তার ভালবাসার মানুষটি। শাওনের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। ফাহিম তখন তার নব্য বধূ রিতার সাথে শাওনের পরিচয় করিয়ে দিলো। রিতা ভাবী, এই হল শাওন আমার বন্ধু। সে ভাল কবিতা লিখতে পারে। কিন্তু দু'মাস আগে একটা বাজে মেয়ে ওকে কি যেন বলেছে তারপর থেকেই এখন আর কবিতা লিখে না। শাওন তখন আবেগপূর্ণ কন্ঠে উত্তর দিলো- আমি যাকে আমার কবিতার মধ্যে লুকিয়ে রাখতাম, যাকে আমি আমার কবিতার মাঝে খোঁজে পেতাম, সেই প্রিয় ভালবাসার মানুষটি চলে যাবার সময় আমাকে বলে গিয়েছিল কবিতা লিখে হয়ত মানসিক প্রশান্তি পাওয়া যায় কিন্তু সংসার চালানো যায় না। তাই যে কবিতার কারণে আমার ভালবাসার মানুষ আমাকে ত্যাগ করে অন্যের হাতে হাত রাখলো সেই কবিতাকে আমি আমার জীবন হতে চিরতরে বিদায় জানাই।


(সমাপ্ত)

শুক্রবার, ৩০ মে, ২০১৪

অনুভূতি : ৫

আমার আকাশের ঘুড়ি 
সুতো চিরে চলে গেলি অন্যের আকাশে,
সেখানে তুই তোরি মত সুখ পেয়েছিস 
আমায় ছেড়ে অন্যের ভালবেসে।
আমার যে এখন তোকে ছাড়া আসেনা ঘুম
চোখের পাপড়িতে জমে শিশিরবিন্দু হয়ে জল,
উত্তর দে প্রশ্ন করি তোকে
আমার আকাশ ছিল কি ছোট বল।
প্রিয় সাথী আমার, প্রিয় পাখি, আমারি প্রিয় প্রিয়া
আর কতকাল, কত বছর-মাস এভাবে থাকা যায়,
তোকে ছাড়া রাত্রিজুড়ে আমার 
ঘুম না চোখে আয়।
আমি যে এখন ঘুমোই না
জেগে থাকি প্রশ্ন নিয়ে,
আমার ভেতর-বাহিরের সাথে বলি কথা
প্রশ্ন করবো কি দিয়ে।
আমি যে যাকে চেয়েছি বেশি
নিজের জীবন হতেও বেশি,
তাকে চাই আজও কাছে
আজও চাই আমার একাকিত্বের পাশে পাশাপাশি।
ইসস, আমার প্রাণের প্রিয়া 
আবার কি তুই আসবি ফিরে,
ফিরে আয় আমার আকাশে
ঘুম না নিলেই বা কেড়ে।
হয়তোবা তুই আসবি না
তুই আছিস ভাল অন্যের ভালবেসে,
অনুরোধ করি তোকে তুই না আসলে 
ফিরিয়ে দে আমার ঘুম সবকিছুর সর্বশেষে।

মনে তোমায় পড়লে পরে

কোন এক অবেলায় 
অথবা কোন এক সন্ধ্যাতারায়,
যদি তোমাকে পড়ে মনে 
হারিয়ে নিজেকে অজানায়।
সবুজ বিস্তৃণর্ খোলা মাঠে 
রাখালিয়া বাশি নিয়ে হাতে,
যদি তোমাকে মনে পড়ে 
আলো-আঁধারের সংঘাতে।
অথবা কোন এক পুরনো দিনে
কোন এক ছলনার আশ্রয়ে,
যদি মনে পড়ে তোমায়
কাঁদবো না  কথা দিলাম শিশু হয়ে।
অথবা আবারো কোন এক চাঁদের নিচে
সাক্ষাত যদি হয় জোছোনায়,
চিনেও তোমার অচেনা হব
মনেতে না পড়ার বাহানায়।

মধ্যবর্তী

আমি ইহকাল-পরকালের মধ্যখানে 
চিরকাল থাকতে চাই।
অমর বা অবিনশ্বর হয়ে নয়,
মৃত বা নশ্বর হয়ে নয়,
আমি ইহকাল-পরকালের মধ্যে 
থাকতে চাই জীবিত লাশ হয়ে।
পৃথিবীর ভোগ-বাসনা
লোভ-লালসা হতে দূরে,
পরকালে মৃত্যূর পর 
স্বর্গ-নরখের কামনা হতে দূরে।

আমি চিরকাল থাকতে চাই 
চন্দ্র-সূর্যের মধ্যখানে।
কড়া রোদ হয়ে 
কিংবা চাঁদনী রাত হয়ে নয়,
থাকতে চাই নাতিশীতোষ্ণ হয়ে।

আমি সুখ-দূখের মধ্যখানে থাকতে চাই
কারো মুখে হাসি হয়ে নয়, 
নয় কারো দূঃখ হয়ে।
সুখ-দূঃখহীন মসৃণ মুখমন্ডল চাই হতে।

আমি চাওয়া-পাওয়ার মধ্যখানে 
থাকতে চাই জীবনবর।
চাওয়া-পাওয়ার হিসেব হয়ে নয়,
ভোগ, চাহিদা বা যোগানের রেখা হয়ে নয়।
আমি চিরকাল থাকতে চাই 
না পাওয়া, না চাওয়ার বিবেক হয়ে।

সর্বস্তরে-সর্বখানে চিরকাল মধ্যস্থানে 
আমি চাই মধ্যবর্তী হতে।

শনিবার, ২৪ মে, ২০১৪

কাছে আয় মৃত্যূ

বিষাদের কালো রাতে 
একলা আমি হারিয়ে ফেলি জীবনের মানে।

জীবনের গতিপথে সঙ্গীহীন পিপীলিকা আমি 
একাই হেঁটে বেড়াই আপন নিজ অক্ষে,
ঠিক ঐ পৃথিবীর মত।

ঘুড়ে ঘুড়ে ঘুড়তেই থাকি লাটিমের গতিতে,
যখন গতিশূণ্য হয়ে বিশ্রাম নেই 
তখন হিংস্র একাকীত্ব বিষধর গোখরো সাপ হয়ে
ছোবল মারে আমার পায়ে।

আমার পায়ে বিষের বিষাক্ত পদার্থ 
এক তলা হতে দু'তলায় উঠার চেষ্টা করে।

দু'তলা আমার প্রাণ পাখি 
আমার অন্তর আত্মার বাসভবন,
আমার অন্তর আত্মা আমার ক্লান্ত দেহ 
শান্ত করার প্রয়াসে ব্যস্ত থাকে।

তারই প্রয়াসে বিষধর গোখরোর বিষাক্ত বিষ 
মিশে যেতে চায় এক নিমিষে।

আমি না হয় শরীরের বিষ 
রোদে শুকিয়ে শুকনো কাদার মত 
চূণর্-বিচূণর্ করে ফেলবো
আমার চার আনা মূল্যের 
খেলনার দেহ হতে।

কিন্তু আমার ষোল আনা মূল্যের অন্তর আত্মাকে 
পরিশুদ্ধ করবো কি দিয়ে
বিষাক্ত বিষের কালো যাদু হতে।

আমার অন্তর আত্মার হাহাকার 
আমার সহ্য হয়না,
আমি নিকৃষ্ট একজন মানব
আমি কোন পাথরের কণা নই।
আমার মধ্যে এত যন্ত্রণা,
এত বিরহ-ব্যথা সহ্য করার সার্মথ্য নেই।

তারচেয়ে বরং মৃত্যূকে আমি 
সহজে বরণ করতে রাজী।

গল্প "আয়না"


সামাজিক ও ধর্মীয় দ্বন্দ্বের কারণে রাশেদ ও মল্লিকার বিয়ে মেনে দিল না তাদের পরিবার। তাদের দোষ কেবল একটাই তারা দুজন দুই ধর্মের অনুসারী। রাশেদ মুসলিম পরিবারের ছেলে আর অপরজন মল্লিকা হিন্দু পরিবারের মেয়ে। এই কারণে তাদের পরিবারের সাথে তাদের সম্পর্ক ছিন্ন। কিন্তু তারা সদ্য বিয়ে করেছে। আজই তাদের বিয়ের প্রথম দিন। রাশেদ তার ডাক্তার বন্ধু মারুফের সহযোগীতায় একটি বাড়িতে বাসা ভাড়া নেয়। কিন্তু এই বাসা ভাড়া নেয়ার ব্যাপারে মল্লিকার কিছু আপত্তি ছিল। কারণ এই বাসার আশে-পাশে অন্য কোন বাসা নেই। অপরপক্ষে বাসাটি লোকালয় হতে দূরে থাকার কারণে রাশেদের ভীষণ পছন্দ হয়েছে। পছন্দের কারণ তারা দুজন ভিন্ন ধর্মাবলী, লোকালয় হতে দূর হওয়ার কারণে তাদেরকে সামাজিক ও ধর্মীয় দ্বন্দ্বের শিকার হতে হবে না। 

বাসার মালিক কোন কিছু জিজ্ঞাসা না করেই অল্প টাকায় বাসা তাদেরকে ভাড়া দিয়ে দিল। রাশেদ ও মল্লিকা এই বাসাতেই তাদের দাম্পত্য জীবনের সূচনা করলো। একদিন মল্লিকা বাসার ছাদে গুদাম ঘরে পরিত্যক্ত কিছু জিনিশের মধ্যে একটি পুরনো আয়না খোঁজে পেল। এটি অনেক পুরনো মাঝারি সাইজের একটি আয়না। আয়নার চারিদিকে স্ট্রিলের ফ্রেমে অসম্ভব সুন্দর কারুকাজ। আয়নাটি তাই মল্লিকার পছন্দ হল। মল্লিকা গুদাম ঘর থেকে আয়নাটি বের করে তাদের শোবার কক্ষের দেয়ালে টাঙ্গিয়ে রাখলো। আয়নাটি কক্ষের সুন্দর্য্য দ্বিগুণ বাড়িয়ে তুললো।

এইভাবে কিছু দিন যাবার পর একদিন মল্লিকা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে তার চোখে কাজল দিচ্ছে। তখন সে আয়নাতে একজন মহিলার প্রতিচ্ছবি দেখতে পেল। মহিলাটি আয়নার সামনে দরজার পিছনে পর্দার পিছে শুধু মাথা বের করে দাঁড়িয়ে আছে। মল্লিকা আচমকা আয়নায় মহিলাটির প্রতিচ্ছবি দেখে জিজ্ঞাসা করলো- কে, কে ঐখানে। কিন্তু কোন উত্তর আসলো না। সে সাড়া বাসায় মহিলাটিকে খোঁজলো। কিন্তু মহিলাটিকে পেলো না। মল্লিকা ভাবলো হয়ত সেটা ছিল তার চোখের ভুল অথবা মনের ভ্রম। তাই সে ঘটনাটিকে তেমন প্রশ্রয় দিল না এবং রাশেদের কাছে বিষয়টি গোপন রাখলো। তারপর হতে যখন-তখন মল্লিকা সেই আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে থাকে। মল্লিকা ঘন্টার পর ঘন্টা আয়নাতে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে কাটিয়ে দেয়। ব্যাপারটা রাশেদ প্রথম দিকে তেমন গুরুত্ব দিল না। সে ভাবলো মেয়েরা আয়নায় নিজের রূপ দেখতে ভালবাসে তাই হয়ত সাড়া দিন আয়নায় তাকিয়ে থাকে। 

কিন্তু একদিন রাশেদ বাহিরের কাজ শেষ করে বাসায় ফিরেছে। সে ভীষণ ক্লান্ত। তারমধ্যে বাসায় বিদুৎ নেই, লোডশেডিং হয়েছে। সে মল্লিকা-কে পাখা দিয়ে একটু বাতাস করে দেয়ার জন্য বললো। মল্লিকা তখনো একদৃষ্টিতে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। রাশেদ ভাবলো মল্লিকা তার কথা শুনে না শুনার ভান ধরেছে। তাই সে মল্লিকা-কে পাখা দিয়ে একটু বাতাস দেয়ার জন্য আবার বললো। কিন্তু মল্লিকা একদৃষ্টিতে আয়নায় তাকিয়ে আছে। 

এতে রাশেদ ক্ষেপে গেল। সে রাগে আয়নাটি আছাড় মেরে ভেঙ্গে ফেলে। সে মল্লিকার দিকে রাগান্বিতভাবে থাকালো। কিন্তু মল্লিকা-কে দেখে সে নিজেই অবাক হয়ে গেল। সে মল্লিকার চোখে অশ্রু হয়ে রক্ত বেরিয়ে আসতে দেখলো। এবং মল্লিকা বিড়বিড় করে কি যেন উচ্চারণ করতে লাগলো। তারপরই মল্লিকা মাটিতে লুটিয়ে পড়ে গড়াগড়ি খেতে লাগলো। রাদেশ কিছুতেই মল্লিকা শান্ত করতে পারেনা। সে মল্লিকার অস্বাভাবিক আচরণে হতভম্ব হয়ে পরলো। মল্লিকার এই দুর্দশায় সে কি করবে ভেবে না পেয়ে তার ডাক্তার বন্ধু মারুফকে ফোন করলো। মারুফ আসে সে নিজেও হতভম্ব হয়ে গেলে। মল্লিকা মাটিতে গড়াগড়ি দিয়েই চলছে। এইভাবে মাস খানেক পাড় হল। কোন ডাক্তারি চিকিৎসায় লাভ হচ্ছেনা। 

একদিন মারুফ একজন তান্ত্রিক রাশেদের কাছে নিয়ে এল, সে ভাবলো হতে পারে সেটা জ্বীন-ভূতের আছড়। মারুফ তান্ত্রিক নিয়ে আসায় রাশেদ অবাক হল কারণ মারুফ মেডিকেল সাইন্স নিয়ে পড়ালেখা করেছে, সে নিজেই একজন ইন্টারি ডাক্তার। অথচ সে জ্বীন-ভূতে বিশ্বাসী। মারুফ রাশেদের মনের কথা আঁচ করতে পারলো। সে রাশেদকে বললো সে জ্বীন-ভূতে বিশ্বাস করেনা, কিন্তু তান্ত্রিকেরা বিশেষ ক্ষমতার অধিকারী তাদের কাছে হয়ত এই সমস্যার সমাধান রয়েছে।

অতঃপর তান্ত্রিকের সামনে মল্লিকা-কে নিয়ে আসা হল। তান্ত্রিক শুধু মল্লিকার চোখের দিকে থাকালেন এবং চোখের কালো মনিতে একটা মহিলার প্রতিচ্ছবি দেখতে পেলেন। রাশেদ ও মারুফ চমকে গেল। তান্ত্রিক বললেন তিনি পরিষ্কারভাবে দেখেছেন মল্লিকার চোখেতে একটি মহিলার প্রতিচ্ছবি। কিন্তু মল্লিকার সামনে কোন মহিলা নেই। 

তান্ত্রিক রাশেদের কাছে জানতে চাইলেন মল্লিকার এইরকম আচরণে পিছনে কারণ কি। রাশেদ সবকিছু খোলে বললো, মল্লিকা সাড়া দিন একটি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতো, একদিন রাগে সে আয়নাটি ভেঙ্গে ফেলে তারপর থেকেই মল্লিকার এই দূর্দশা। তারপর তান্ত্রিক জানতে চাইলেন আয়নাটি মল্লিকা কোথায় পেয়েছে। রাশেদ বললো বাসার ছাদে গুদাম ঘরে আয়নাটি ছিল, গুদাম ঘরে আরো কিছু পুরনো জিনিশ আছে, এইসব জিনিশ তাদের বাসার মালিকের, আয়নাটিও বাসার মালিকের।

তান্ত্রিক বাসার মালিকের সাথে সাক্ষাত করতে চাইলেন। তান্ত্রিকের সামনে বাসার মালিক কে আনা হল। তিনি আয়নাটি কোথায় পেয়েছিলেন আর আয়নাটি গুদাম ঘরে রাখার আগে কোথায় ছিল সেটা জানতে চাইলেন। বাসার মালিক বললেন আয়নাটি উনি উনার বিয়ের পর উনার স্ত্রীকে উপহার দিয়েছিলেন, আয়নাটি উনার স্ত্রীর খুব প্রিয় ছিল। কিন্তু উনার স্ত্রীর মৃত্যুর পর উনি পুরনো জিনিশের সাথে আয়নাটি গুদামে রেখে দেন। মৃত্যু কি স্বাভাবিকভাবে হয়েছিল তান্ত্রিক জানতে চাইলেন। হ্যাঁ, মৃত্যু স্বাভাবিকভাবেই হয়েছিল বাসার মালিক উত্তরে বললেন, কিন্তু মৃত্যুর আগে উনি আয়নার দিকে থাকিয়ে উনার শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন। 

সবকিছু শোনার পর তান্ত্রিক রাদেশকে বললো মল্লিকার চোখে ঐ মহিলাটি অন্য কেউ নয়, তিনি হলেন বাসার মালিকের স্ত্রী। এটি বাসার মালিকের স্ত্রীর আত্মা। উনি মৃত্যুর আগে সেই আয়নার দিকে থাকিয়ে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন যার ফলে উনার আত্মা শরীরের সাথে যোগসূত্র ছিন্ন করার পর সেই আয়নাতে ডুকে পরে। আয়নার একটা বিশেষ শক্তি রয়েছে যা শুধু জীবিত মানুষকে আকর্ষণ করে তা নয়, বরং জীবিত মানুষের পাশাপাশি আত্মাদের কেও আকর্ষণ করে। সে আকর্ষণের ফলে আত্মারা আয়নার ভেতরে ডুকে যায়। কিন্তু আয়নার ভেতরে ডুকার পর আত্মা কখনোই আয়নার ভেতর হতে বের হতে পারেনা। আত্মাকে আয়নাতেই বন্ধী হয়ে থাকতে হয়। অনেকে হয়ত ভাবতে পারেন আত্মা যখন আয়নাতে বন্ধী তখন আয়না ভেঙ্গে ফেললে বন্ধী আত্মা মুক্ত হয়ে যাবে। কিন্তু না, আয়না ভেঙ্গে ফেললে বন্ধী আত্মা মুক্তি পায় না। বরং তখন আত্মা অশুভ শক্তিতে পরিণত হয়।

রাদেশ তখন তান্ত্রিকের কাছে মল্লিকার চোখে মহিলাটি কিভাবে আসলো তা জানতে চাইলো। তান্ত্রিক বললেন মল্লিকা নিশ্চয়ই যখন আয়নায় তাকাতো তখন ঐ মহিলাকে দেখতে পেত। যার ফলে মল্লিকা বারবার সেই আয়নার সামনে দাঁড়াতো। কিন্তু সে আয়নায় নিজেকে দেখার জন্য দাঁড়াতো না, কেবল ঐ মহিলাকে দেখার জন্য দাঁড়াতো। তার চোখ কেবল মহিলাটিকে দেখার জন্য তাকে আয়নার সম্মুকে তাকাতে বাধ্য করত। যার ফলে তার চোখের কালো মনিতে মহিলাটির আত্মার প্রতিচ্ছবি সৃষ্টি হয়। মহিলাটির আত্মার প্রতিচ্ছবি মল্লিকা চোখে রয়েছে এবং আত্মাটি তার মুক্তির দাবিতে মল্লিকার উপর অত্যাচার করে যাচ্ছে।

বাসার মালিক এর প্রতিকার জানতে চাইলেন, তান্ত্রিক বললো প্রথমে উনার স্ত্রীর আত্মার মুক্তি দিতে হবে, আত্মা মুক্তি পেলে মল্লিকা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে। তান্ত্রিক রাশেদকে আয়নার ভাঙ্গা কাঁচের টুকরো যোগার করতে বললেন। আয়নার ভাঙ্গা টুকরোগুলো রাশেদ ঘরের ডাষ্টবিনে ফেলে রেখেছিল। সে ডাষ্টবিন থেকে আয়নার ভাঙ্গা টুকরোগুলো তান্ত্রিক-কে এনে দিল। তান্ত্রিক বাসার মালিক-কে উনার স্ত্রীর কবরস্থানে নিয়ে যাবার জন্য বললেন। 

বাসার মালিক তান্ত্রিক, রাশেদ, মারুফ এবং মল্লিকাকে উনার স্ত্রীর কবরস্থানে দিয়ে গেলেন। মল্লিকাকে ঐ মহিলার কবরের সামনে আনা হল । তান্ত্রিক রাশেদ ও মারুফকে বললেন ওরা যেন মল্লিকাকে শক্ত করে ধরে রাখে যাতে মল্লিকা মাটিতে পড়ে গড়াগড়ি না খায়। রাশেদ ও মারুফ মল্লিকাকে দুপাশে শক্ত করে ধরে রাখলো। তান্ত্রিক বাসায় মালিকের স্ত্রীর কবরের পাশে ছোট একটি গর্ত খুদলেন। অন্যদিকে মল্লিকার মধ্যে অস্থিরতা বেড়েই চলছে। তান্ত্রিক গর্তের ভেতরে আয়নার ভাঙ্গা কাঁচের টুকরোগুলোকে মাটি দিয়ে পুঁতে দিলেন এবং উচ্চস্বরে মন্ত্র পড়তে লাগেন। খানিকক্ষণ মন্ত্র পড়ার পর মল্লিকার মধ্যে অস্থিরতা কেঁটে উঠলো। কিন্তু মল্লিকা মহিলাটির কবরের দিকে তাকিয়ে অশ্রু ঝড়াচ্ছে। সে চিৎকার করে কাঁদছে। এইভাবে কাঁদার কিছুক্ষণ পর মল্লিকা অজ্ঞান হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো। তান্ত্রিক তখন বললেন মল্লিকা অজ্ঞান হয়নি, সে এখন গভীর ঘুমে। অনেক দিন ধরে মল্লিকার শরীর ঘুমায় নি। মল্লিকার এখন অনেক ঘুমের প্রয়োজন। ঘুম শেষে সে তার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে। 

বাসার মালিক তার স্ত্রীর আত্মা মুক্তি পেয়েছে কি না সে বিষয়ে তান্ত্রিকের কাছে জানতে চাইলেন। তান্ত্রিক তখন সবকিছু ভেঙ্গে বললেন। কবরের পাশে গর্ত করে ভাঙ্গা আয়নার টুকরো পুঁতে ফেলায় সেই আয়নার মধ্যে লুক্কায়িত শক্তি অচল হয়ে যায়। যার ফলে মহিলটির আত্মা শিথিল হয়ে পড়ে এবং মল্লিকা নিরব হয়ে কবরের দিকে তাকিয়ে কান্না শুরু করে। কিন্তু চোখ হতে অশ্রু মল্লিকার বের হয়নি, অশ্রু বের হয়েছে মৃত সেই মহিলার আত্মার। মল্লিকার চোখ ছিল আত্মাটির জন্য একটি মাধ্যম মাত্র। অশ্রু বের হওয়ার ফলে আত্মাটি শান্তি ফিরে পায়। এবং মুক্তির জন্য চোখ হতে বের হওয়া অশ্রুতে মল্লিকার চোখে আত্মাটির প্রতিচ্ছবি মিটে যায়। যায় ফলস্বরূপ আত্মা ও মল্লিকা উভয়ে মুক্তি পায়।

দু'ঘন্টা পর মল্লিকার ঘুম ভাঙ্গলো। তার সাথে কি কি ঘটেছিল তা কিছুই তার মনে নেই। সে এখন স্বাভাবিক। মল্লিকাকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে পেয়ে রাশেদ মল্লিকাকে জড়িয়ে ধরলো। কিছু দিন পর বাসার মালিকের নির্দেশে তারা ঐ বাসাটি ত্যাগ করে। তারা তাদের পরিবারের কাছে ফিরে যায়। তাদের হিন্দু-মুসলিম পরিবার তাদের বিয়ে মেনে নেয়। তারা তাদের পরিবারের সাথে নিজেদের মতন করে তাদের সংসার সাজায়। আজ মল্লিকা ফুটফুটে এক কন্যা সন্তানের জননী কিন্তু সে আজো জানেনা ঐ আয়নাতে সে কি দেখেছিল। 



(সমাপ্ত)

ঘুম গুম

সাগর সৈকতে একটি কাঁকড়ার মত আমি
বারবার সাগরের দিকে এগিয়ে যাই।

সাগরের স্বাদ কেমন
সেই স্বাদের পিছনের রহস্য জানার জন্য 
সাগরকে দুই বাহুতে আলিঙ্গন করার জন্য 
বারবার আমি সাগরের দিকে এগিয়ে যাই।

কিন্তু অভাগা স্মৃতি
সাগরের স্রোতে সৃষ্ট ডেউয়ের মত পাড়ে এসে 
ধাক্কা দিয়ে পিছনে টেনে নেয় আমায়।

আমি সাগরকে যুদ্ধের রণক্ষেত্র ভেবে 
নিজেকে সাহসী যোদ্ধার মত প্রস্তুত করি,
আবার সাহস যোগাই সাগর ছোঁয়ার বাসনা নিয়ে।

নির্দয় সাগরের মনে দয়া নেই
সে বারবার আমাকে ধাক্কা দিয়ে 
ফেলে দেয় পিছনে,
যেখানে আমি আমাকে খোঁজি না।

আমি খোঁজি সেই সৃষ্টিকর্তাকে 
যিনি গড়েছেন আমার সম্মুখীত 
অবাস্তব স্বপ্নের পথভ্রষ্ট রূপ।

পরিণামে যিনি দিয়েছেন আমাকে 
নিরানন্দ তিমিরে ঘুম আচ্ছন্ন চোখে 
ঘুমহীন হয়ে থাকার অনাসৃষ্টির ত্তজস্বিতা।

বুধবার, ২১ মে, ২০১৪

বিধাতার লীলা

বিধাতা এ তোমার কেমন লীলা,
যে দিকে থাকাই পাই চুড়াবালির ডেলা।
সেই চুড়াবালিতে পা পিছলিয়ে 
পেলাম চোখের পাতায় আঘাত,
কত কাটাবো হিজাবের আড়ালে 
সূর্য লুকিয়ে রাত।
হাত থেকে পড়ে কাঁচের মত
ভেঙ্গে যায় সহজে ঘুম,
রক্তাত অবস্থায় দেহ পাই পাশে
শঙ্কা-ভয়ে কাঁটা দিয়ে উঠে লোম।
বাতাসে নৌকা উড়িয়ে হিমালয় ফেলিয়ে
চলে যেতে ইচ্ছে হয় অন্য কোথা,
সেখানে পায়ে থাকবে না বাঁধা 
দড়ি নামক শক্ত সুতা।
হাতে থাকবেনা হাতকড়ি,
বেলাভুমিতে ফলিয়ে ফসল
ভেঙ্গে ফেলবো যেখানে দেয়ালের ছড়াছড়ি।
জ্বালিয়ে ফেলবো সব জ্বালানি দিয়ে
চার কোণায় জ্বলবে আগুন,
নয় মন্দ পান্তা আনতে 
ফুরিয়ে যাক নুন।
তারপরও কখনো বিধাতার সাথে 
বসবোনা সমঝোতায়,
ফিরিয়ে দাও পূর্বেকার জীবন 
পূর্বের আমি আমারি এক কথায়।
দাবি বললে বলবো দাবি,
খোলো সিন্দুক খোঁজো উত্তরের চাবি।
প্রশ্ন একটাই কেন বানালে নারী
বানালে যখন বানালে তখন
দিলে চুড়াবালির ক্ষমতা,
কেন তোমার এত লীলা 
উত্তর দাও বিধাতা।

শনিবার, ১৭ মে, ২০১৪

ভালবাসার পরিমাণ

কী করে আমি বলবো তোকে
ভালবাসি তোকে কত,
ভালবাসার পরিমাণ যদি তুই জানতি
আমাকেও বাসতি তত।
কিন্তু কেন অবুঝ তুই
বারবার জানতে চাস,
আমার বুকে ভালবাসা
বেশি নাকি হ্রাস।

কি করে বল বুঝাই তোকে
পাইনা মুখে ভাষা,
কোন ভাষায় বলবো বুকে
সবই তোরই ভালবাসা।
তুই যদি চাস দলিল করে
মালিকানা করবো হস্তান্তর,
লিখে দেবো ভালবাসা
চিরস্থায়ী তোর।

তবুও যদি ভালবাসার পরিমাণ
আবার জানতে চাস,
মহাদেবের সেই কবিতায়
করবো বস-বাস।
বলবো তখন যখন তুই 
জানতে চাস কত ভালবাসি,
অন্ধকারে লুকিয়ে মুখ
আমি নিজের মনেই হাসি।



"ভালবাসার পরিমাণ" আমার এই কবিতার শেষের দুই লাইন কবি মহাদেবের "তুমি যখন প্রশ্ন করো" কবিতা হতে নিয়েছি. মূলত আমার লেখা এই কবিতা কবি মহাদেবের কবিতার ছায়া অবল্বনে লেখা, তবে অর্থগত তারতম্যে দুটি ভিন্ন দুটি কবিতা.


বৃহস্পতিবার, ১৫ মে, ২০১৪

আকাশ ক্রয়ের ভাবনা

আকাশ কিনিবো বলে করিয়াছি পণ,
সে যে বহু অমূল্য রতন।
কত কিছু, কত মেঘ, অদৃশ্য বায়ু,
হেথায় সেথায় পাড়ি জমায় বিশ্বের জরায়ু।
উড়ন্ত পংখীর উড়ন্ত ডানায় ছোঁয়া দেয় রামধনু,
অগ্নিমূর্তির অগ্নিশিখা দ্বিতীয় নাই কোনো।
নীল বর্ণের আবরণে উদার পরিচয়,
কিনিবো তাহাকে সম্ভব যদি হয়।
আকারে বৃহৎতম, সীমাহীন সীমানা,
চন্দ্রলোকের ঠিকানা কোথায়, আসলেই অজানা।
যদি জানিতাম তোর বসতি, কোথায় আছে, কোন দেশে,
আজি যায়িতাম বেড়াতে খরিদ্দারের বেশে।
গিয়ে বলিতাম চুক্তি করিবো আকাশ ক্রয়ের দায়, 
যে আকাশে কাগজের ঘুড়ি সুতা চিঁড়িয়া যায়।
আমিও যদি হইতাম ঘুড়ি, হারিয়ে যায়িতাম নীলে,
সঙ্গী হয়ে হিংস্র পক্ষী শকুন, ঈগল, চিলে।

বুধবার, ১৪ মে, ২০১৪

সাত পাকে সর্ম্পক

বউয়ের মতন সাজিয়ে তোকে
সাত পাকের বাঁধনে রাখবো বেঁধে,
ফুলের সাথে ভালবাসা
এক সুতোয় রাখবো গেঁথে।

অগ্নি-কে সাক্ষী রেখে
তুমি আমি হলাম এক,
সাত পাকে প্রেম আমাদের
অন্যভাবে না হয় দেখ।

আজকে তোকে কথা দিলাম
বউ ডাকবো ভালবেসে,
আমার জন্য আজকে তুই
সিঁদুর দিবি মিষ্টি হেসে।

সাত পাকে তুমি আমি
থাকবো বেঁধে যুগান্তর,
তোর কপালে লাল সিঁদুর
জিয়ন্ত থাক কালান্তর।

অপেক্ষার ষড়ঋতু

চলে গেলে তুমি চৌরাস্তার মোড়ে আমায় একা ফেলে
যাবার আগে বলেছিলে আবার আসবে ফিরে,
সেই অপেক্ষায় আমি রইলাম জেগে 
পথে ধারে ভাঙ্গা নিড়ে।
দিন পাড় হল, পাড় হল রাতের
তবু তুমি এলেনা, এল কাছে গ্রীষ্ম,
উপহার দিল আমাকে উত্তপ্ত সূর্য।
ভেসে গেল আমার অশ্রু কাল-বৈশাখী ঝড়ে,
ঘরশূন্য আমি রইলাম চৌরাস্তার মোড়ে।
চলার পথে বন্ধু হয়ে কাছে এল বর্ষা,
আমার শোকে কাঁদলো সে
মেঘাচ্ছন্ন আকাশ দিল ভরসা।
ভাদ্র-আশ্বিনের কাঁধে চড়ে আসলো শরৎ
মনের আকাশ হল পরিচ্ছন্ন,
তুমি আসবে ফিরে সাদা মেঘের জন্য।
সেই মেঘের পিছু পিছু এলে না তুমি
বরং এল হেমন্ত,
নবান্ন উৎসবে উঠলো মেতে কৃষাণীর আনন্দ।
সেই আনন্দে পাতাহীন গাছে দেখা দিল শীত,
কুয়াশার চাদর গাঁয়ে জড়িয়ে গাইলাম অপেক্ষার গীত।
আমার সুরে সুর মিলালো গায়ক পাখি কোকিল,
সেই সুরে ঋতু রাজ বসন্ত খোঁজলো তাহার মিল।
ফুলে ফুলে পরিপূর্ণ চৌরাস্তার মোড়,
পূর্ণ চাঁদের সাথে হল দেখা
তবুও তুমি অনেক দূর।
একে একে বিদায় নিলো ছয়টি ঋতু
তোমার অপেক্ষায় তুমি আসলে না ফিরে,
পুরনো চৌরাস্তার মোড়ে।
ছয়টি ঋতু  হয়ত আবার ফিরে আসবে
কিন্তু তুমি কখনোই ফিরবেনা ।

মঙ্গলবার, ১৩ মে, ২০১৪

"দড়ি -The Rope" আমার লেখা একটি গল্প, জানি না ভালো লাগবে কী-না তবুও শেয়ার করলাম

"দড়ি -The Rope"


জনি এবং আনিকা ট্রেনে করে কক্সবাজার যাচ্ছে। জনির শুশুর জনাব আশরাফ বলেছিলেন ট্রেন ষ্টেশনে রফিক নামে একজন লোক আসবে তাদের রিসিভ করার জন্য। কক্সবাজারে জনাব আশরাফের বাঙ্গলো বাড়ি আছে। রফিক হল এই বাঙ্গলো বাড়ির একজন কেয়ার টেকার। কিন্তু ট্রেন যখন রাত সাড়ে বারোটায় ষ্টেশনে পৌঁছলো তখন তাদের রিসিভ করার জন্যে কেউ এলো না। 

কক্সবাজার জনি ও আনিকার জন্য নতুন শহর। এখানে তাদের পরিচিত কেউ নেই, তার উপর এখন রাত। রাতের বেলা অপরিচিত শহর মোটেই নিরাপদ নয়। তাই যথাসময়ে রফিক নামক লোকটি-কে না পেয়ে তারা দুজন কিছুটা উদ্বিগ্ন হয়ে পরলো। হটাৎ কে যেন পিছন দিক হতে জনির কাঁধে হাত দিলো। জনি পিছনে মাথা ঘুরিয়ে দেখলো তিনি একজন বৃদ্ধলোক। লোকটি জনিকে জিজ্ঞেস করলো তুমি নিশ্চিয় জনি। 

জনি ইতিবাচক উত্তর দিয়ে লোকটির পরিচয় জানতে চাইলো। লোকটি বললো উনার নাম মোখলিছ আলী, তিনি রফিকের পিতা। তিনি আগে কখনো জনি ও আনিকাকে দেখেননি তাই ষ্টেশনে তাদের খোঁজে পেতে উনার দেরি হয়ে গেছে। 

লোকটি কথা বেশি না বাড়িয়ে জনি ও আনিকাকে বাঙ্গলো বাড়িতে নিয়ে গেল। বিড়াট বড় বাঙ্গলো বাড়ি অথচ এখানে লোকটি একা কাজ করে। লোকটি জানি ও আনিকাকে তাদের রুম দেখিয়ে দিল। রাতের খাবার শেষে নব-দম্পতি ঘুমাতে গেলো। দীর্ঘ জার্নির কারণে দুজন ভীষণ ক্লান্ত। ক্লান্ত শরীরে ঘুম তারাতারি চলে আসলো।

মাঝরাতে দরজায় নাড়া দেয়ার শব্দ হল। অভ্যাসবশত জনির ঘুম হাল্কা শব্দতেই ভেংগে যায়। সে দরজার পাশে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো, কে, কে নাড়া দিচ্ছে? দরজার ওপাশ থেকে উত্তর আসলো আমি রফিকের পিতা মোখলিছ আলী । জনি দরজা খোলে মোখলিছ আলীকে জিজ্ঞেস করলো এত রাতে আপনি এখানে, কিছু বলবেন? মোখলিছ আলী উত্তরে বললেন বিছানার তলায় একটা দড়ি আছে তিনি সেই দড়িটি নিতে এসেছেন। জনি উনাকে বিছানার তলা হতে দড়ি এনে দিলো। উনি দড়ি নিয়ে চলে গেলেন।

পরদিন সকালবেলা জনি ও আনিকা ঘুম থেকে উঠে সাড়া বাঙ্গলোতে মোখলিছ আলী-কে খোঁজে পেলো না। জনি ড্রাইনিং রুমে টেবিলে নাস্তা সাজানো পেলো। এখানে আনিকা একটি চিরকুট পেল। চিরকুটে মোখলিছ আলী লিখেছেন বাঙ্গলোতে উনার ডিউটি শুধু রাতের বেলা, দিনে বাঙ্গলোতে উনার কোন কাজ থাকেনা তাই উনি উনার বাড়িতে চলে গেছেন । সন্ধ্যার পর বাঙ্গলোতে আসবেন।

জনি-আনিকা নাস্তা শেষে সমুদ্র উপভোগের জন্য সমুদ্র সৈকততে বেড়িয়ে পরলো। রাত্রিবেলা তারা বাড়ি ফিরলো। মোখলিছ আলী রাতের খাবার টেবিলে সাজিয়ে দিলো। রাতের খাবার খেয়ে তারা দুজন ঘুমাতে গেলে গত রাতের মত আজকেও মাঝরাতে মোখলিছ আলী রুমের দড়জায় নাড়া দিলেন। জনি দরজা খোললো। মোখলিছ আলী জনিকে বিছানার তলা হতে দড়ি এনে দিতে বললেন। জনি কিছুটা বিরক্তিকরভাবে দড়িটি এনে দিল। মোখলিছ আলী দড়ি নিয়ে চলে গেলেন।

গতদিনের মতন জনি-আনিকা ঘুম থেকে উঠে মোখলিছ আলীকে খোঁজে পেলনা। কিন্তু মোখলিছ আলী আগের দিনের মতন টেবিলে নাস্তা এবং চিরকুট রেখে গেছেন। চিরকুটে লেখা সন্ধ্যা পর উনি বাঙ্গলোতে ফিরবেন।

নাস্তা শেষে জনি ও আনিকা সাগরের পথে বেড়িয়ে পরলো। সূর্যাস্ত উপভোগের পর রাত্রিবেলা তারা বাঙ্গলোতে ফিরে এল। তারা রাতের খাবার বাহিরে খেয়ে এসেছে। তাই বাড়িতে ফিরে তারা সারাসরি ঘুমাতে চলে গেল। কক্সবাজারে আজ তাদের তৃতীয় রাত। ঘুমনোর আগে জনি ভাবলো মাঝরাতে মোখলিছ আলী এসে বিরক্ত করবে, তারচেয়ে ভাল হবে ঘুমানোর আগে উনাকে উনার দড়ি দিয়ে আসা। কিন্তু সে বিছানার তলায় কোন দড়ি খোঁজে পেলো না। দড়ি না পেয়ে জনি নিশ্চিন্তভাবে ঘুমিয়ে পরলো, সে ভাবলো হয়ত মোখলিছ আলী আগে থেকেই দড়ি সরিয়ে রেখেছে । 

কিন্তু না, মাঝরাতে দড়জায় নাড়া দেয়ার শব্দ হল। জনি ঘুম থেকে উঠে দরজা খোলে রাগান্বিতভাবে জিজ্ঞেস করলো, কি ব্যাপার মোখলিছ চাচা , দড়ি নিতে এসেছেন নিশ্চিই। মোখলিছ আলী হ্যাঁ বোধক উত্তর দিলো। জনি বললো বিছানার তলায় কোন দড়ি নেই, সে ঘুমানোর আগে খোঁজে দেখেছে। কিন্তু বৃদ্ধ মোখলিছ আলী কোনভাবেই জনির কথা মানতে রাজী নন। তিনি তাকে বিছানা তলা আবার খোঁজে দেখার জন্য অনুরোধ করলেন। জনি নিরুপায় হয়ে বিছানার তলায় আবার দড়ি খোঁজতে গেল। 

কিন্তু আবাক কান্ড। বিছানার তলায় একেবারে সামনে দড়িটি রাখা। অথচ ঘুমাতে যাবার আগে যখন সে দড়িটি খোঁজেছিল তখন সেখানে দড়ি ছিল না। রুমে সে এবং আনিকা ছাড়া তৃতীয় কেউ নেই আর রুমের দরজা ভেতর হতে লক করা, তাই অন্য কারো পক্ষে রুমে ডুকে লুকিয়ে বিছানার তলায় দড়ি রাখা অসম্ভব। তাহলে হটাৎ কি করে বিছানা তলায় দড়ি আসলো। দড়ির তো হাত-পা নেই যে আপনা-আপনি চলে আসবে। জনি মনে মনে এইসব প্রশ্ন নিয়ে ভাবতে লাগলো। বৃদ্ধ মোখলিছ আলী দড়ি নিয়ে চলে গেলেন।

জনি এই সব ভাবতে ভাবতে সিগারেট জ্বালালো এবং অতি আগ্রহে সে জানাতে চাইলো মোখলিছ আলী প্রতিরাতে দড়ি দিয়ে করে কি। খানিকক্ষণ পর জনি রহস্য উদঘাটনের জন্য মোখলিছ আলীর শোবার রুমের দিকে গেল। সেখানে গিয়ে জনি দেখলো ফ্যানের সাথে ঝুলে আছে দড়ি দিয়ে গলায় ফাঁশ লাগানো অবস্থায় মোখলিছ আলীর মৃত দেহ। 

এই অস্বাভাবিক দৃশ্য দেখে জনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। পরে যখন তার জ্ঞান ফিরে তখন সে দেখতে পেলো তার পাশে আনিকা বসে আছে এবং তার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন আনিকার পিতা জনাব আশরাফ ও একজন অপরিচিত মধ্যবয়স্ক একটা ছেলে। ছেলেটি তার পরিচয় দিলো, তার নাম রফিক। সে ষ্টেশনে আসতে পারেনি কারণ সে আশরাফ সাহেবকে না জানিয়ে তার দেশের বাড়িতে চলে গিয়ে ছিল। আর আশরাফ সাহেব বাঙ্গোলর ঠিকানায় টেলিগ্রাম করে জানিয়ে ছিলেন জনি-আনিকার আসার কথা। বাঙ্গলো তখন খালি ছিল। আনিকা তখন রফিককে জিজ্ঞেস করলো তাহলে ঐ  বৃদ্ধ মোখলিছ আলি উনি কে? রফিক উত্তরে বললো মোখলিছ আলী তার পিতা। তিনি এই বাঙ্গলোতে প্রায় ত্রিশ বছর যাবত কেয়ার টেকারের দ্বায়িত্বে কর্মরত ছিলেন। 

বছরখানেক আগে কোন এক অজানা কারণে গভীর রাতে তিনি গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। কিন্তু উনার আত্মার আজো মুক্তি মিলেনি। প্রতি রাতে সন্ধ্যার পর গভীর রাত পর্যন্ত উনার আত্মা এই বাঙ্গলোতে ঘুড়ে-বেড়ায়। বছরখানেক আগে যে রাতের যে প্রহরে উনি আত্মহত্যা করেছিলেন সে প্রহরে প্রতি রাতে উনার আত্মা আত্মহত্যা করে। এবং উনি যে দড়ি দিয়ে গলায় ফাঁস দিয়েছিলেন সে দড়িটি উনার আত্মা প্রতি রাতে খোঁজে বেড়ায়।

রবিবার, ১১ মে, ২০১৪

মৃত্যূর পর দক্ষিণা জানালায়

মৃত্যূর পর আমার মৃত দেহ
রেখে দিও দক্ষিণের জানালার ধারে,
আমি চাই আমার মৃত দেহতে 
দক্ষিণা বাতাস লাগুক,
বাতাসে শীতল দেহ আরো শীতল হয়ে যাক।
আমি চাই আমার মৃত দেহের পাশে 
ছোট চড়ই পাখি গুণগুণ করুক,
গুণগুণিয়ে একসময় পাখিটি হারিয়ে যাক।
আমি চাই বড় রাস্তা ধরে 
একটি গাড়ি আমার দিকে এগিয়ে আসুক,
গাড়িতে বসে যেন কেউ আমায় জীবিত ভেবে 
একাধারে হাতছানি দিয়ে যাক।
আমি চাই মাঝরাতে বৃষ্টি হোক, 
বৃষ্টি হলে বৃষ্টির পানি আমার মৃত দেহতে পড়ুক,
জ্বর উঠলে উঠুক, আমি চাই সারা দেহ 
বৃষ্টিতে ভিজে যাক।
পর দিন সকাল হলে ভোরের প্রথম আলো
এসে আমার দেহতে লাগুক,
শুনেছি ভোরবেলা সূর্যের প্রথম আলো স্বাদে মিষ্টি 
সেই মিষ্টি স্বাদে আমার মৃত দেহ জ্বলসে যাক।
তীব্র গরমে মৃত দেহতে ঘাম ঝড়ুক,
প্রয়োজন হলে ঘামের সাগরে গোসল হয়ে যাক,
পরে দেহ শুকিয়ে গেলে, ভীষণ শুকিয়ে গেলে 
দক্ষিণা জানালার ধারে আমার মৃত দেহ পচুক,
পচে বিলীন হয়ে যাক।

বৃহস্পতিবার, ৮ মে, ২০১৪

বন্ধী জীবন

ধর্ম, সমাজ, সর্ম্পক, 
আবেগ, বিবেক, প্রেম এবং নিয়তী,
এই সাত রঙ্গের সাতটি দেয়ালে সীমিত আমি।
গোলাকার বৃত্ত হয়ে আমার চারিপাশে 
তাদের শক্ত অবস্থান,
আমি মধ্যখানে ঐ বৃত্তের ভেতর আটক,
আমায় ঘিরে বৃত্ত, আমি বৃত্তের কেন্দ্রবিন্দু।
ইচ্ছে হলেই পারি না আমি 
বৃত্তের বাহিরে পা দিতে,
স্বপ্ন দেখলেই আমি পারি না 
গ্লাসে স্বপ্নের সাথে বাস্তব মিশিয়ে খেতে,
আশা জাগে একের পর এক, আশাতে আসে নিরাশা 
কারন বৃত্তের পরিভাষা, তবুও খোঁজি একটু ছিদ্র 
বৃত্তের গোলাকার কাঁটাতারের আবদ্ধ হতে 
বেড়িয়ে আসার তাগিদে।