এখন জানায়ার নামাজ শেষে ঋতুর করব দেয়া শেষ। একে একে ঋতুর সকল আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবীরা সবাই চলে গেল। শুধু জড় পদার্থের মতন স্থির হয়ে রিয়াদ দাঁড়িয়ে রইলো ঋতুর কবরের পাশে। তার চোখের অশ্রু শুকিয়ে গেছে। অশ্রু উৎপন্ন করার ক্ষমতা চোখ হতে বিনাশ হয়ে গেছে। একসময় রিয়াদ প্রশ্ন তুললো সকল সৃষ্টির স্রষ্টার কাছে। বিদাতা আমি তো তোমার কাছে তেমন কিছু চাই নি। শুধু চেয়েছি একটি প্রেম। শুধু চেয়েছি সাজানো একটি সংসার। চেয়েছি ঋতুর সঙ্গ। কিন্তু তুমি বিদাতা কেড়ে নিলে আমাদের দুজনের দেখা এক-ই স্বপ্ন। ক্ষুধার্ত মৃত্যুকে তুমি পাঠিয়ে দিলে। মৃত্যু একসাথে আমরা দুজনকে খেয়ে নিলো।
বিদাতা সে না হয় কবরে মাটির ভেতর ঘুমিয়ে থাকবে চিরকাল চিরনিদ্রায়। কিন্তু এই আমি কি করে কি দিয়ে কাটাবো আমার প্রাণের বাকীটুকু সময়।। আমি যে আজ আমার প্রেমের মৃত্যুতে পরিণত হলাম জিন্দা লাশে। যে লাশ দেখবেনা আর কখনো রংগিন স্বপ্ন। খোঁজবেনা নতুন করে এই জীবনের মানে। বিদাতা আজ থেকে আমি তোমার বিপরীত। তোমার সৃষ্টির বিপরীত। বিদায় জানাই বিদাতা তোমাকে আমার মনের মসজিদ হতে। যেখানে তুমি জন্ম দিয়েছিলে প্রেম, সেখানে আমি জন্ম দিলাম তোমার প্রতি ঘৃণা।
এইভাবে কেটে গেল দু'বছর। রিয়াদ ইংলেন্ড যাবার ভিসা পেয়েছে। আগামীকাল সকালে রিয়াদের ফ্লাইট। সে তার রুমে বসে ব্যাগ গুছাচ্ছে। এমন সময় একটি মেয়ে কন্ঠ রিয়াদের নাম ধরে ডাক দিল। রিয়াদ, এই রিয়াদ, শুনতে পারছো তুমি, বাহিরে একটু আসবে, অনেক কথা বলার ছিল তোমাকে।
এইভাবে কেটে গেল দু'বছর। রিয়াদ ইংলেন্ড যাবার ভিসা পেয়েছে। আগামীকাল সকালে রিয়াদের ফ্লাইট। সে তার রুমে বসে ব্যাগ গুছাচ্ছে। এমন সময় একটি মেয়ে কন্ঠ রিয়াদের নাম ধরে ডাক দিল। রিয়াদ, এই রিয়াদ, শুনতে পারছো তুমি, বাহিরে একটু আসবে, অনেক কথা বলার ছিল তোমাকে।
রিয়াদ জানালা দিয়ে চেয়ে দেখলো রাস্তায় একটি মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মেয়েটির কণ্ঠ তার কিছুটা পরিচিত মনে হচ্ছে। রিয়াদ তড়িঘড়ি করে ঘরের বাহিরে গেল। তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে একটি ধপধপে ফর্সা মেয়ে। মেয়েটির পরনে সাদা সেলুয়ার কামিজ। বুকেতে লাল ওরনা। মেয়েটি যেন বিদাতার নিজ হাতে সৃষ্টি করা ডানাহীন অপ্সরী।
রিয়াদ তুমি আমাকে চিনতে পারলেনা। আমি তোমার প্রেম। তোমার ঋতু। যাকে তুমি আজো তোমার বুকেতে বেধে রেখেছো প্রেমের বন্ধনে। রিয়াদ জড়িয়ে ধরলো ঋতুকে। চুমু খেতে লাগলো ঋতুর ঠোঁটে মুখে। ঋতু তুমি জীবিত। কোথায় ছিলে লুকিয়ে এত দিন? ঋতু উত্তর দিল, কে বলেছে আমি জীবিত। আমি জীবিত নই রিয়াদ। আমি এখন মৃত। তুমি নিজের হাতেই আমাকে করব দিয়েছো তোমার মনের মসজিদ হতে বিদাতাকে তাড়িয়ে দিয়ে। কীভাবে বিদাতার কাছে তুমি প্রশ্ন করলে রিয়াদ, কীভাবে তোমার হল এত দুঃসাহস? যে বিদাতাকে তুমি আজ ঘৃণ্য চোখে দেখো সেই বিদাতার হাতে সৃষ্টি হয়েছিল আমাদের প্রেম। তার-ই হাতে সৃষ্টি হয়েছি আমি, সৃষ্টি হয়েছো তুমি। সৃষ্টি হয়েছে সমস্ত প্রাণীকুল। পরিনামে তিনি রেখেছেন মৃত্যু অবধারিত। কিন্তু তুমি ভুলে গিয়েছো স্রষ্টার এই বাণী।
রিয়াদ মৃত্যু হয় মানুষের, প্রেমের কখনো মৃত্যু হয় না । আমি হয়ত তোমার মধ্যেই জীবিত রইতাম। কিন্তু রিয়াদ তা আর সম্ভব না। বিদাতা আমাকে পাঠিয়েছেন তোমাকে নিয়ে যাবার জন্য। রিয়াদ চলে এসো আমার সাথে। চল সেই সদূর পথ ধরে। বিদাতা তোমার অপেক্ষায় আছেন। তিনি চান তোমার দেহ হতে প্রাণ ছিন্ন হয়ে যাক। তিনি চান তোমার ধ্বংস। তুমি আজ কাফির, নাস্তিক। তুমি আজ ধর্ম-কর্মহীন মানব।
রিয়াদ নিরবে ঋতুর কথা শুনেই যাচ্ছে। তার কিছুই করার নেই তখন। তার হাতে লাগানো বাস্তব-অবাস্তের অদৃশ্য হাতকড়ি। সে পরিষ্কারভাবে বুঝতে সক্ষম এই ঋতু পূর্বের ঋতু নয়। এই ঋতু বিদাতা কর্তৃক প্রদত্ত একজন দূত সেজে আসেছে, তার প্রাণের পাখীকে শারিরীক কাঠামোতে তৈরি খাঁচা হতে মুক্তি দেওয়ার জন্যে। তার মৃত্যু এখন তার কাছেই। তীব্র বাতাসের বেগে বিড়াট একটি ট্রাক এসে মাঝ রাস্তায় পিষে ফেললো রিয়াদকে। চারিদিকে রিয়াদের রক্ত ছড়িয়ে পরলো। ছিন্নভিন্ন হয়ে গেল রিয়াদের দেহ। যে দেহতে জীবিত থাকার সকল উপাদান-ই ছিল, কিন্তু ছিল না বিদাতার প্রতি আত্মসমর্পণ।
(সমাপ্ত)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন