রবিবার, ২৯ জুন, ২০১৪

শেষ সীমানায়

মাঝে মধ্যে হটাৎ পালিয়ে যেতে 
ইচ্ছে হয় পৃথিবীর শেষ সীমান্তে,
সুখ-কে সাথী ভেবে 
নিজেরি অজান্তে।
দূঃখ-কে জানিয়ে বিদায় 
চোখে অশ্রুর খনি বন্ধ করে,
পালিয়ে যেতে ইচ্ছে হয়
কর্ম দিবসের প্রতিটি বারে।
একটু একটু করে সাজাবো মন
সূর্যকে বানাবো প্রতিবেশি,
রামধনুর বাঁকা ঠোঁটে
ফুটবে টোল পড়া হাসি।
ভালবাসা সঙ্গে করে 
না হয় আনলাম,
কাগজে লিখে না বলা কথা
ভালবেসে বললাম।
আমি নিজেই পারি ভালবাসা
একা জন্ম দিতে,
নিজেই পারি একা একাকী 
শেষ সীমানায় যেতে।
হারিয়ে যাওয়ার নেই ভয়
হারিয়েছি অনেক কিছু,
কে জানে কী আছে
সুখের সম্মুক-পিছু।
সব হারিয়ে আমি স্বার্থপর 
ত্রীভূবনের পাঠশালায়,
জগৎ সংসার সব অদেখা 
আবেগী মায়া কান্নায়।
যা আমার অচিন পাখি
চাই না আর কাছে,
আখিলে চন্দ্রলোকে
খুঁতখুঁতে দেবী নাচে।
শেষ সীমানায় প্রেমের গাছে
কম্র ফুল নক্ষত,
আমার আমি আপন পদে 
সুখে দূঃখে আনন্দিত।

গল্প "মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১"

এলোপাতাড়িভাবে চারিদিকে বৃষ্টির মতন গুলি ছড়িয়ে পরছে। বাসাতে গোলা-বারুদের গন্ধ। নিরস্ত্র বাঙ্গালীর হাহাকার চতুর্দিকে। সেই সাথে পাক সেনারা ঘরে ঘরে টহল দিতে শুরু করেছে। প্রথম সারির কয়েক ঘরের পর-ই রোকেয়াদের ঘর। ঘরে রোকেয়া ও তার স্বামী অসহায়ের মত পড়ে আছে। রোকেয়ার স্বামী সিরাজের ডান পা ছোটবেলায় পোলিও-তে আক্রান্ত হওয়ায় কারণে সেটা অকেজো। তাকে লাটিতে ভর করে হাঁটতে হয়। ইতি মধ্যে পাক সেনারা রোকেয়ার ঘরে ডুকে পরছে। পাঁচ জন পাক সেনা। এদের মধ্যে একজন তাদের গ্রুপ লিডার।

সে সিরাজের দিকে আঙ্গুল দেখিয়ে বাকি চার পাক সেনাকে নির্দেশ দিলো সিরাজকে বাহিয়ে নিয়ে যাবার জন্য। ওরা টেনেহিঁচড়ে সিরাজকে ঘরের বাহিয়ে নিয়ে গেলো। ওরা সিরাজকে মাটিতে ফেলে মারতে শুরু করলো। সিরাজের পিঠে-পেটে কয়েক ডজন লাতি মারলো। অন্যদিকে ঘরের ভেতর পাক সেনার গ্রুপ লিডার টেনে খোলে ফেললো রোকেয়ার শরীর হতে শাড়ী। ধর্ষণ করলো রোকেয়াকে। একে একে পাঁচজন পাক সেনা রোকেয়াকে ধর্ষন করলো। সিরাজ শত চেষ্টা করেও পারলোনা রোকেয়ার ইজ্জত বাচাঁতে।

পাক সেনারা যাবার পূর্বে সিরাজকে গুলি করে মেরে ফেলতে চেয়েছিল। গ্রুপ লিডার তখন বললো, ঠিক মতন নিজ পায়ে খাড়া হওয়ার ক্ষমতা ওর মধ্যে নাই। একে প্রাণে মারতে হবেনা, সে এমনেতেই তার ধর্ষিতা স্ত্রীর সাথে মরে যাবে। এই বলে পাক সেনারা তাদের ঘর থেকে চলে গেলো। আহত সিরাজ ধীরে ধীরে মাটিতে গড়াগড়ি দিয়ে ডুকলো ঘরের ভেতর। ভেতরে ধর্ষিত নির্বাক রোকেয়ার রকাক্ত শরীর। সে বসে আছে সর্ব শান্ত হয়ে। সিরাজ ও রোকেয়া একে অন্যকে দেখে কাঁদতে শুরু করে।

পরবর্তীতে একদিন সিরাজ চলে যায় মুক্তিসেনাদের দলে। যাবার আগে সে রোকেয়াকে কথা দিয়েছিল এই অন্যায় অত্যাচারের বদলা সে নিবেই। রোকেয়ার সম্মানহানির প্রতিশোধ তাকে নিতেই হবে। কিন্তু রোকেয়ার মনে ভয় ছিল, যে লোক নিজ পায়ে ঠিক মত দাঁড়াতে পারে না সে কিভাবে যুদ্ধ করবে। যুদ্ধ সিরাজের পক্ষে সহজ না। কিন্তু শারীরিক দুর্বলতাকে তোয়াক্কা না করে সিরাজ যুদ্ধে গেছে সেটাই ছিল রোকেয়ার জন্য গর্বের বিষয়।

সিরাজ চলে যাবার পর অসহায় রোকেয়া পথ চেয়ে থাকতো। সে অপেক্ষা করতো কবে সিরাজ ফিরে আসবে বিজয়ের পতাকা হাতে নিয়ে। অবশেষে দেশ স্বাধীন হল। স্বাধীন হবার কিছু দিন পর রোকেয়ার কাছে একটি চিঠি আসলো। চিঠিতে লেখা ছিল:

প্রিয়তমা রোকেয়া,

অনেক দিন তোমাকে দেখি না। তোমাকে দেখতে অনেক ইচ্ছে করে। কিন্তু কিভাবে আমি তোমার সামনে দাঁড়াবো। তোমার সামনে দাঁড়ানোর মুখ আমার নেই। স্বামী হয়ে আমি পারলাম না তোমাকে শ্লীলতাহানি হতে রক্ষা করতে। সে ভয়ংকর দৃশ্যটি আজো আমার চোখে ভাসে। চোখে বন্ধ করলেই আমার চোখে ভেসে উঠে তোমার মলিন মুখ। কর্ণপাত করি তোমার চিৎকার। তোমাকে কথা দিয়েছিলাম তোমার সাথে যে অন্যায় হয়েছে সে অন্যায়ের উচিত বিচার আমি করবোই। যার জন্যে এই যুদ্ধতে আমার আসা। আমার পায়ের কারণে আমার অন্য মুক্তিসেনা ভাইরা আমাকে সরাসরি যুদ্ধে যেতে দেয় না। যদিও ভারি অস্ত্র হাতে নিয়ে দাঁড়ানোর ক্ষমতা আমার নেই। আমি তাই আহত মুক্তি ভাইদের দেখাশোনা করি। ওদের সেবা করে সুস্থ করে তুলি। কিন্তু রোকেয়া আজ আমি বিড়াট সুযোগ পেয়েছি। আজ আমি সরাসরি যুদ্ধে যাবো। আমার শরীরে এখন আত্মগাতী বোমা লাগানো। আমার সামনে মানুষ রূপি পাকিস্তানি কুকুরদের ক্যাম্প। একটু পর ওরা রাতের খাবার সেরে বিশ্রাম নেবে। আমি তখনি ডুকে পরবো ওদের ক্যাম্পে। সেখানে যে তাবুতে গোলা-বারুদ রাখা সে তাবুতে আমি ডুকে বিড়াট বিষ্ফোরন ঘটাবো। এক নিমিষেই সমস্ত ক্যাম্প ধূলোয় মিশে যাবে। সাথে মিশে যাব আমিও। জানি না কবে আমার এই চিঠি তোমার হাতে পৌঁছবে। যখন পৌঁছবে তখন আমি থাকবো না স্বাধীন এই দেশে। কিন্তু এই ভেবে আমার বিন্দু পরিমাণ কষ্ট হচ্ছে না। বরং আমি গর্বিত তোমাকে একটি স্বাধীন দেশ উপহার দিতে পারবো তুমিসহ হাজারো মা-বোনের সম্মানের বিনিময়ে।

ইতি,
তোমার সিরাজ।

(সমাপ্ত)

নারী

যুগের পর যুগ আমি নিজেকে সামলিয়ে রেখেছি
আমার আর সামলানো সম্ভব না।
আমি এখন নারীকে কাছ থেকে স্পর্শ করতে চাই,
জানতে চাই কী আছে নারীর মায়াবী দেহে?
নিজ হাতের উষ্ণ ছোঁয়ায় পরশ বুলিয়ে
দেখতে চাই নারীর মনের গুপ্ত স্নেহ-ভালবাসাকে।
জানতে চাই নারী তোমাকে,
তুমি কীসের তৈরি 
কাঁদামাটিতে নাকী আগুনে?
আমি পরখ করে দেখতে চাই নারী
তোমার মন কোন আকৃতির,
গোলাকার নাকী আয়তাকার?
শুনেছি নিরাকার তোমার মন।
তাতে আমার বিশ্বাস হয় না নারী
আমি জানি, দেখেছি যুগ যুগ ধরে
তুমি নারী প্রেমের দেবী,
কিন্তু নারী আজো আমার অজানা রয়ে গেল
কীভাবে তুমি জন্ম দাও 
এক সাগর ঘৃণা তোমার মনের প্রাসাদে?

তোমাতে শুরু আমাতে শেষ

তোমাতেই আমার শুরু
আমাতেই তোমার শেষ,
এই হবে প্রেম মোদের
এতেই রব বেশ। 

তুমি হবে সুচনা প্রেমের
আমি শেষ তার পরিণতি,
দুজন দুজনার দুনয়নে  
জ্বলন্ত প্রেমের মোমবাতি। 

 তোমাতে আমি, আমাতে তুমি
প্রেমের ধ্বনিতে নর্তকী মন,
নাচে প্রেম তোমাতে-আমাতে
এক দেহে সারাক্ষণ। 

বাতাস

নেশার চোখে দেখেছি বাতাসের রং-রূপ
বাতাসের গঠন, আকার-আকৃতি
বাতাসের গতিতে পেয়েছি বাতাসের গন্ধ
নিয়েছি এক বুক বাতাসের স্বাদ,
বাতাসের সাথে কথা বলেছি
ধরেছি বাতাসের হাত।

বাতাসের পাশে বসে 
বাতাসের চোখে সাঁতার কেঁটে,
বাতাসের কাঁধে রেখেছি কাঁধ 
চুমো দিয়েছি বাতাসের ঠোঁটে,
সমস্ত অঙ্গে মাখিয়ে বাতাস
জেনেছি ধ্বংসের পূর্বাভাস।

ধ্বংসের সাথে ধ্বংসের পর 
বাতাস হয়ে বাতাসে থাকবো মেতে
নেশাখোর জীবনের জীবাণু নিয়ে 
পরিণত হব নিষ্প্রাণ বাতাসে।

গল্প "পরিনাম"

হটাৎ করেই বেজে উঠলো রিয়াদের ফোন। ফোন ধরার সাথে সাথে রিয়াদ কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো। কিছুক্ষণ পর রিয়াদের এক বন্ধু এসে তাকে নিয়ে গেল ঋতুদের বাসায়। সেখানে সাদা কাপড়ে মুখঢাকা ঋতুর মরদেহ। ঘন্টা খানিক আগে ঋতুর মরদেহ সিংগাপুর থেকে এসেছে। সিংগাপুরের ডাক্তাররা ঋতুকে ব্রেইন টিউমারের হাত থেকে বাঁচাতে পারেনি। ঋতু রিয়াদকে কথা দিয়েছিল সিংগাপুর থেকে সুস্থ হয়ে ফিরে আসেই তারা বিয়ের কাজ সেরে ফেলবে। তাদের দুজনার স্বপ্ন ছিল তাদের প্রেম সাংসারিক রূপে রূপান্তরিত হোক। কিন্তু ভাগ্যে নির্মম পরিহাস। স্বপ্ন ঝরে পরলো গাছের শুকনো পাতা হয়ে। 

এখন জানায়ার নামাজ শেষে ঋতুর করব দেয়া শেষ। একে একে ঋতুর সকল আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবীরা সবাই চলে গেল। শুধু জড় পদার্থের মতন স্থির হয়ে রিয়াদ দাঁড়িয়ে রইলো ঋতুর কবরের পাশে। তার চোখের অশ্রু শুকিয়ে গেছে। অশ্রু উৎপন্ন করার ক্ষমতা চোখ হতে বিনাশ হয়ে গেছে। একসময় রিয়াদ প্রশ্ন তুললো সকল সৃষ্টির স্রষ্টার কাছে। বিদাতা আমি তো তোমার কাছে তেমন কিছু চাই নি। শুধু চেয়েছি একটি প্রেম। শুধু চেয়েছি সাজানো একটি সংসার। চেয়েছি ঋতুর সঙ্গ। কিন্তু তুমি বিদাতা কেড়ে নিলে আমাদের দুজনের দেখা এক-ই স্বপ্ন। ক্ষুধার্ত মৃত্যুকে তুমি পাঠিয়ে দিলে। মৃত্যু একসাথে আমরা দুজনকে খেয়ে নিলো। 

বিদাতা সে না হয় কবরে মাটির ভেতর ঘুমিয়ে থাকবে চিরকাল চিরনিদ্রায়। কিন্তু এই আমি কি করে কি দিয়ে কাটাবো আমার প্রাণের বাকীটুকু সময়।। আমি যে আজ আমার প্রেমের মৃত্যুতে পরিণত হলাম জিন্দা লাশে। যে লাশ দেখবেনা আর কখনো রংগিন স্বপ্ন। খোঁজবেনা নতুন করে এই জীবনের মানে। বিদাতা আজ থেকে আমি তোমার বিপরীত। তোমার সৃষ্টির বিপরীত। বিদায় জানাই বিদাতা তোমাকে আমার মনের মসজিদ হতে। যেখানে তুমি জন্ম দিয়েছিলে প্রেম, সেখানে আমি জন্ম দিলাম তোমার প্রতি ঘৃণা। 

এইভাবে কেটে গেল দু'বছর। রিয়াদ ইংলেন্ড যাবার ভিসা পেয়েছে। আগামীকাল সকালে রিয়াদের ফ্লাইট। সে তার রুমে বসে ব্যাগ গুছাচ্ছে। এমন সময় একটি মেয়ে কন্ঠ রিয়াদের নাম ধরে ডাক দিল। রিয়াদ, এই রিয়াদ, শুনতে পারছো তুমি, বাহিরে একটু আসবে, অনেক কথা বলার ছিল তোমাকে।

 রিয়াদ জানালা দিয়ে চেয়ে দেখলো রাস্তায় একটি মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মেয়েটির কণ্ঠ তার কিছুটা পরিচিত মনে হচ্ছে। রিয়াদ তড়িঘড়ি করে ঘরের বাহিরে গেল। তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে একটি ধপধপে ফর্সা মেয়ে। মেয়েটির পরনে সাদা সেলুয়ার কামিজ। বুকেতে লাল ওরনা। মেয়েটি যেন বিদাতার নিজ হাতে সৃষ্টি করা ডানাহীন অপ্সরী। 

রিয়াদ তুমি আমাকে চিনতে পারলেনা। আমি তোমার প্রেম। তোমার ঋতু। যাকে তুমি আজো তোমার বুকেতে বেধে রেখেছো প্রেমের বন্ধনে। রিয়াদ জড়িয়ে ধরলো ঋতুকে। চুমু খেতে লাগলো ঋতুর ঠোঁটে মুখে। ঋতু তুমি জীবিত। কোথায় ছিলে লুকিয়ে এত দিন? ঋতু উত্তর দিল, কে বলেছে আমি জীবিত। আমি জীবিত নই রিয়াদ। আমি এখন মৃত। তুমি নিজের হাতেই আমাকে করব দিয়েছো তোমার মনের মসজিদ হতে বিদাতাকে তাড়িয়ে দিয়ে। কীভাবে বিদাতার কাছে তুমি প্রশ্ন করলে রিয়াদ, কীভাবে তোমার হল এত দুঃসাহস? যে বিদাতাকে তুমি আজ ঘৃণ্য চোখে দেখো সেই বিদাতার হাতে সৃষ্টি হয়েছিল আমাদের প্রেম। তার-ই হাতে সৃষ্টি হয়েছি আমি, সৃষ্টি হয়েছো তুমি। সৃষ্টি হয়েছে সমস্ত প্রাণীকুল। পরিনামে তিনি রেখেছেন মৃত্যু অবধারিত। কিন্তু তুমি ভুলে গিয়েছো স্রষ্টার এই বাণী।

রিয়াদ মৃত্যু হয় মানুষের, প্রেমের কখনো মৃত্যু হয় না । আমি হয়ত তোমার মধ্যেই জীবিত রইতাম। কিন্তু রিয়াদ তা আর সম্ভব না। বিদাতা আমাকে পাঠিয়েছেন তোমাকে নিয়ে যাবার জন্য। রিয়াদ চলে এসো আমার সাথে। চল সেই সদূর পথ ধরে। বিদাতা তোমার অপেক্ষায় আছেন। তিনি চান তোমার দেহ হতে প্রাণ ছিন্ন হয়ে যাক। তিনি চান তোমার ধ্বংস। তুমি আজ কাফির, নাস্তিক। তুমি আজ ধর্ম-কর্মহীন মানব।

রিয়াদ নিরবে ঋতুর কথা শুনেই যাচ্ছে। তার কিছুই করার নেই তখন। তার হাতে লাগানো বাস্তব-অবাস্তের অদৃশ্য হাতকড়ি। সে পরিষ্কারভাবে বুঝতে সক্ষম এই ঋতু পূর্বের ঋতু নয়। এই ঋতু বিদাতা কর্তৃক প্রদত্ত একজন দূত সেজে আসেছে, তার প্রাণের পাখীকে শারিরীক কাঠামোতে তৈরি খাঁচা হতে মুক্তি দেওয়ার জন্যে। তার মৃত্যু এখন তার কাছেই। তীব্র বাতাসের বেগে বিড়াট একটি ট্রাক এসে মাঝ রাস্তায় পিষে ফেললো রিয়াদকে। চারিদিকে রিয়াদের রক্ত ছড়িয়ে পরলো। ছিন্নভিন্ন হয়ে গেল রিয়াদের দেহ। যে দেহতে জীবিত থাকার সকল উপাদান-ই ছিল, কিন্তু ছিল না বিদাতার প্রতি আত্মসমর্পণ। 

(সমাপ্ত)

অভিলাষের বৃষ্টি

অভিলাষের বৃষ্টি এলে ধরণীর দুয়ারে,
ভালবেসে ওই বুক পেতে নিও সখি আমারে।
আমি প্রিয় যাপন করি অন্য কাননের ফুলে,
বৃষ্টি এলে শোভন স্বস্তির কথা বলে।
আমি কঠোর হই না রূষ্ট স্বনে তখন,
যখন অভিলাষের বৃষ্টিতে শান্ত মন।
দিগন্তের চারিধার আসে কালো ছায়া হয়ে, 
কড়া সূর্য নেয় ছুটি মেঘের আদর নিয়ে।
আনন্দমেলায় পাক-পাখালির লুকোচুরি, 
অভিলাষে সূরজুড়ে বিরাজমান অপ্সরী। 
যেখানে যার দেখায় বর্ষা কন্ঠে মাখা,
শত কাব্যে কবি লেখে পদ্য অশ্রুরোধে লিখা।
টাপুরটুপুর ধ্বনিতে ধ্বনিত নূপুর,
অস্থির প্রাণের অভিলাষ চুরি করে চোর।
তার খোঁজে বৃষ্টির দিনে মনমরা ঐ প্রাণ,
অভিলাষে অভিলাষী আমি গাই না কোন গান।

আমি ও আমার দু'খন্ড মন

আমার মনের গহীনে মাঝ বরাবর দুই খন্ড,
এক অংশে সাধু অন্য অংশে বসত করে ভন্ড।
এক অংশে হিংসায় জ্বলে প্রতিশোধের আগুন,
অন্য অংশ গান গেয়ে বেড়ায় প্রেমের তৈরি কানুন।
দুই অংশের মধ্যখানে বিপদগ্রস্ত এই আমি,
অংশ দুটো জোড়া লাগানোর কঠিন চেষ্টায় নামি।
কিন্তু মন আমায় প্রশ্ন করে কঠোর কথা কয়,
অভাগা আমি কেমনে বলি নিজেই নিজের পরিচয়। 
ইচ্ছে যখন হয় খুব খেপে হাতিয়ার ধরি হাতে,
উত্তর যে পাই না তখন সজ্জিত খুনির জাতে।
আমার মনের ভন্ড অংশ রক্ত পিয়াসী খুনি,
সাধু মন সুখের সন্ধানে বলে শান্তি প্রিয় বাণী।
দু'খন্ড মনের সাথে আমার হয় না কেনো সন্ধী, 
মধ্যস্থানে আহত আমি নিহতদের সাথে বন্দী। 
অনধীনতার দাবিতে দুই খন্ডে চলিত লড়াই,
মনের গহীন দুই খন্ডে খন্ডিত হয়েছে তাই।
পারি না আমি কোনো খন্ডে দিতে নিজের সমর্থন,
এক অংশ মনুষ্যত্বের সাথে চলিত দামি ধন।
অন্য অংশ পশুত্বের বলে আমি হলাম দানব,
আমি বলি আমি মন ভাঙ্গা শুধুই ক্ষুদ্র মানব।

(কবিতায় প্রতিটি চরণে ব্যবহৃত বর্ণের সংখ্যা ও সর্বমোট চরণের সংখ্যা সমান। প্রতিটি চরণে ২০টি বর্ণ ও কবিতায় মোট চরণের সংখ্যা ২০টি।)

সদৃশতায় অসদৃশ

আমি তোমার মত নই, কিন্তু ঠিক তোমারি মতন
দুই হাত, দুই চোখ, দুই পা
এগুলো না হয় সাধারণ বৈশিষ্ট্য।
তারচেয়ে বরং বেশি মিল দুই প্রাণের একাত্বতায়,
দুই দেহে প্রবাহিত একই প্রাণের ভিন্ন রঙ্গে
একইন স্বাদের ভালবাসার ভিন্ন আলপনায়।

ঠিক তোমারি মতন আমিও ভালবেসেছি
ঠিক তোমারি মতন সমপরিমাণে।
আমি বেসেছি তোমার মনের সূক্ষ্ম অনুভূতিকে 
বৃহৎ আকারে ঠিক তোমারি মতন,
তুমি বেসেছো অন্য ভুবনের অন্য স্বপ্নপুরুষকে
জন্ম দিয়েছো পার্থক্য দুই দেহে, দুই মানবের শরীরে।

আমি ভেবেছিলাম পার্থক্যশূন্য আমরা একই প্রাণ,
কিন্তু তুমি দেখিয়ে দিলে চোখে আঙ্গুল দিয়ে
ভেদ-ভেদাভেদের চুক্তিতে ভেদ করে অসদৃশ।
আমি ভেবেছিলাম তোমার সব প্রেম-প্রীতি,
সবই ছিল আমারি প্রতি।

এই ভেবে নিজের ভাবনায় প্রসব করেছি 
একের পর এক পদ্য,
জীবনের গদ্য কাহিণীতে পানি ঢেলে
মুছলে তুমি আমার কল্পনায় রাঙ্গানো আলপনা।
শিখিয়ে দিলে সাধারণ বৈশিষ্ট্য ব্যতীত
অভ্যন্তরীণ গোপন অসমতুল্য গুণাগুণ।

তোমার প্রেমে স্বশিক্ষিত আমি এখন,
অহং প্রেমের অভিজ্ঞতা থেকে
জেনেছি, বুঝেছি, শিখেছি 
আমি তোমার মত নই, কিন্তু ঠিক তোমারি মতন।

শনিবার, ২৮ জুন, ২০১৪

যেভাবে হবে আমাদের বাসর

ভীতুর মতন জানি আমি প্রবেশ করবো
আমাদের প্রথম রাতের মিলন কক্ষে।

চারিদিক থাকবে সাজানো-গুছানো,
নরম বিছানায় থাকবে 
আমার প্রিয় ফুল গোলাপের পাপড়ি,
সাথে কিছু থাকবে রজনী গন্ধা
নরম বিছানার বক্ষে।

ফুলগুলো হয়ত রাতের সময়ে 
হারিয়ে ফেলবে মিষ্টি সুবাস,
তারপরও সুবাসহীন ফুলে 
ভাসবে আমাদের প্রথম মিলনের সুগন্ধ।

বিছানার মাঝখানেতে তুমি 
বসে রইবে গোমটা দিয়ে,
আমি ভীতু পরবোনা সহজে সরাতে 
লাল শাড়ীর গোমটার ছন্ধ।

যুদ্ধের উদ্দেশে্য রওয়ানা হওয়া যুদ্ধার মতন
আমি জমাবো ধীরে ধীরে সাহস,
ভয়কে সঙ্গে নিয়ে সরাবো তোমার গোমটা।

নয়নে আমার স্পর্শ পাবে মূখখানি তোমার,
কি তখন বলবো আমি, অজানা কোন কথাটা।

বোধহয় নিরবে নিচের দিকে দৃষ্টি দিয়ে
বসে রইবো অমি নিরব।

নিরবতা আমার বড্ড প্রিয়।
কিন্তু নিরব হলে চলবে না,
প্রেম নিবেদন করতেই হবে আমাকে।
প্রেমিকরূপে বলেতে হবে কথা সব।

পানজাবির পকেটে করে
আমি নিয়ে আসবো কিছু একটা উপহার 
তোমারি জন্যে, শুধু তোমারি কারণে।

সেটা হয়ত হবে মূল্যবান কোন বস্তু
হবে অথবা রক্ত লাল গোলাপ।
সাথে থাকবে একখানা কাগজ।

কাগজের চারটি ভাঁজ খোলার পর 
বেরিয়ে আসবে তোমাকে নিয়ে লেখা 
আমার কোন একটি কবিতা।

আমি হয়ে যাবো তখন রবি ঠাকুর 
কবিতার ভাষায় বলবো দু-একটি কবিতার চরণ।

হয়ত তুমি মুগ্ধ হবে যখন জানতে পারবে 
আমিও কবিতা লিখি, আমিও একজন কবি।

সেই রাতে কথা আমরা বলবোনা বেশিক্ষণ,
আমি সঙ্গে নিয়ে আসবো 
আরো কিছু ছোট ছোট কাগজ।

চিরকুটে সাজাবো লিখে লিখে 
প্রথম রাতে মনের কথাগুলো।

মুখের কণ্ঠধ্বনি পাবে ছুটি সেই রাতে
সেই রাতে আমার দুজন, 
মাঝখানে চিরকুট।

একসময় দুজনের চার চোখের প্রণয়ে আসবে ঘুম
তুমি না চাইলেও আমি বলবো তোমাকে ঘুমাতে,
নিজ হাতে পরিয়ে দেব ঘুমের মুকোট।

নতুন স্বপ্ন রচিত হবে 
দুজনার সুরেলা নতুন প্রেমে।

দুজন তখন দুদিকে মুখ করে 
একই ছাদের তলায় একই বিছানায় 
ঘুমাবো দুটি ভিন্ন ঘুমে।

তোমার ঘুমে তুমি সাজাবে
আমাকে নিয়ে সংসার সাজানোর স্বপ্ন।

আমার ঘুমে আমি আঁকাবো 
তোমায় নিয়ে জীবন গড়ার স্বপ্ন।

প্রিয় স্কুল জীবন

ফিরে যেতে ইচ্ছে হয়
পুরনো স্কুল জীবনে,
পড়ালেখার নামে দুষ্টামি 
কারণে-অকারণে।

ভোরবেলা স্যারের বাসায় 
পড়া শেষে স্কুলের পথে যাত্রা,
এসিমব্লিতে রং-তামাশা 
স্যারের কঠোর বার্তা। 

কার পায়ে কি জুতো
সাদা নাকি কালো,
শার্টের বুকে আইডি কার্ড 
কতই লাগতো ভালো।

প্রথম ক্লাসে রোল কল
এক-দুই-তিন,
কে পালিয়েছে হাফ পিরিয়ডে
ফাঁকি দিয়ে গত দিন।

শাস্তি তাকে পেতে হবে
জোরসে বেতের প্রহার,
হোম-ওয়ার্ক কে করেছে
অংক মিলেছে কার।

মিনিট পঁয়তাল্লিশ পরে যখন
উঠে বেজে ঘন্টা,
সময় শেষ প্রথম ক্লাসের
আনন্দে খুশি মনটা।

সুযোগ পেলে বারান্দায়
একটু মারো উঁকি,
পরের ক্লাসে পড়া ম্যাডামের
মিলে সবাই শিখি।

দ্বিতীয়-তৃতীয় ক্লাস শেষে
চতুর্থ ক্লাসের পালা,
টিফিন নিয়ে কাড়াকাড়ি
বড়-ই মধুর জ্বালা।

হাফ পিরিয়ডে পেলে সুযোগ 
কেউ পালায় কেটে,
কেউ আবার পাড়ি জমায় 
গ্লার্স স্কুলের গেটে।

বন্ধু নিয়ে অনেকেই
খেলাধূলায় ব্যস্ত,
আড্ডা-বিনোদনে সবাই সবার
গল্প-কথায় ন্যস্ত। 

ধীরে ধীরে ফিরে যায়
যে যার ক্লাসেতে,
দুষ্টামিতে মুখখানি
মেতে অট্টহাসিতে। 

পঞ্চম পিরিয়ডে তখন ক্লাস
হয়ে গেলে শুরু,
ক্লান্ত সবাই গোমরা মুখে 
সাজে নিরব তরু।

ষষ্ঠ-সপ্তম-অষ্টমের পর
আসে বিদায়ের ছুটি,
বাড়ির পথে বন্ধুর সাথে
অল্প হাটাহাটি। 

(মৌলভীবাজার সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে আমার স্কুল জীবনের আলোকে রচিত)