রবিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০১৪

অদ্ভূত ছেলের অদ্ভূত কাহিনী

অদ্ভূত শহরের ছেলে বড্ড অদ্ভূত,
কুয়াশাঘেরা প্রবল প্লাবনে হত উদ্ভূত।
রাতের নীল জোঁছনাতে করত চলাচল,
এভারেষ্টের চূঁড়াতে রাখতো নিজের দখল।
পৃথিবী হয়ে ঘুড়ে-বেড়াত আপন নিজ অক্ষে,
গ্রহ-নক্ষত এসে দাঁড়াতো স্বয়ং তার কক্ষে।
তীর চুঁড়ে নিশান দেখাতো ভূবনের চিত্রে,
শর্ত কিছু মেলাতো ডানা তার-ই কেবল ক্ষেত্রে।
তার বেলায় ছিল না মূল্য শক্ত-নরম স্তরে,
তবু কেন আঁধারবেলা আসতো পক্ষান্তরে।
হীরক পরিচয়ের দামী পাথরে সৃষ্ট বাহ্যিকতা,
জায়গা করার ছিল না বনে আদ্য প্রয়োজনীয়তা।
স্থীর দেহের অস্থীর মনে আলাদা সকল খন্ড,
ক্ষত-বিক্ষত অঙ্গ আঘাতে অযথা লন্ডভন্ড।
ভাঙ্গা কিন্তু মন প্রায় ভীষণ তার শক্ত,
ভেসে আসে ভেলায় ঘ্রাণ প্রাণেতে অতিরিক্ত।
সভ্যতার বিকাশ হল সাথে সে হল সভ্য,
নিশিতে করত খেলা সামগ্রী চন্দ্র নারীর দ্রব্য।
হাজারো কালোর ভেতরে অন্ধকার প্রিয় প্রছন্দ,
মিলনের ডাকে হত কেবল কবিতা হয়ে ছন্ধ।

হাবিজাবি কিছু কষ্ট

না বলা কিছু কষ্টকে আজ
লিখে রেখেছি গাছের পাতায়,
অশ্রু হয়ে ঝরছে শিশির
চোখের কালো গোলক খাঁচায়।
আবেগ নামক দুষ্টু বিড়াল
ঝগরা করে শুধু,
বিবেকের ঐ ডালিম গাছে
নেমেছে অন্ধকার মৃদু।
অন্ধকারে বাতি জ্বলে
আশার প্রদীপ নিভু হয়ে,
কেউ বুঝে না আমার বুকে
ফুল ফুটেছে কষ্ট নিয়ে।
ফুলের নাম রেখেছি পদ্ম
পদ্মানদীতে নৌঙ্গর খাঁড়া,
তার-ই বেদনায় কষ্টেরা যত
হয়ে রয়েছে পাগলপারা।
পাগলা দিনে বিকেল বেলা 
বেড়াতে আসে ক্লান্ত কাক,
ভাঙ্গা মনে কষ্টের পদ্ম
মেঘের সাথে দেয় যে ডাক।
সেই ডাকে অবুঝ আমি
খুঁজি তোমার চিঠির খাম,
গাছের পাতায় লিখে রেখেছি
কষ্ট মাখা সরঞ্জাম।

আমার পথে আমি: ৩

অনন্তকাল ধরে বহমান নদীর মধ্যবর্তী হেঁটে চলছি আমি,
বন্ধুর সমতুল্য নদীর প্রতিটি স্রোতে উঁচু-নিচু বেলাভূমি।
জোয়ার-ভাটার টানে পিছু ডাকে আমায় আমার কর্ম,
আমি তাকে দেই না সাড়া, আমার বুকে শক্ত-কঠিন চর্ম।
আমি এখন অনন্তকাল ধরে বহমান নদীতে অসামান্য পথিক,
আমার কাছে আমার যাত্রাপথ সর্বশ্রেষ্ঠ অধিক।
ডানে-বামে কে আছে, কে চায়, দেখার সময় নেই,
আমি আছি আমাতে মেতে, যুগ-যুগান্তর ধরে তাতেই হানা দেই।
পিছু ডাকে কত-শত প্রিয় সাথি, প্রিয় বন্ধু,
সময় নেই, কেন দেবো সাড়া 
উদ্দেশ্য পাড়ি জমাবো বৃহৎ বিষাদ-সিন্ধু।
ওরে আমার প্রিয় মানুষের ভিড়ে অপ্রিয় মানুষের দল,
তোদের প্রেমের অভিনয়ে আমি বুঝি শ্রেয় লবনাক্ত জল।
সমুদ্র জল আর আঁখি জল দুটোই এখন সমান, পার্থক্যহীন তরল,
তোদের কাছে আমিও তেমন স্বর্ন অপেক্ষা নগন্য পিতল।
জানি আমি ছাড়া তোরা আছিস সুখে তোদের মত শুষ্ক জলাশয়ে,
তার চেয়ে ভালো অনন্তকালের বহমান নদী
যেখানে হেঁটে চলছি আমি যুগের পর যুগ নিজের সাথে নিজের হয়ে।

মঙ্গলবার, ১৫ এপ্রিল, ২০১৪

একটু প্রেমের একটি চারা গাছ

মেয়েটির বাঁকা ঠোঁটের একটু হাসিতে
ছেলেটির বুকে জেগে ছিল একটু আকর্ষণ,
আকর্ষণ থেকে ভালো লাগা,
ভালো লাগা থেকে একটু প্রেম।
ছেলেটি তার বুকে 
সেই একটু প্রেমের একটি বীজ বপন করেছিল,
মেয়েটির মনেও ছিল ছেলেটির প্রতি একটু আকর্ষণ।
আকর্ষণ থেকে ভালো লাগা,
যার ফলস্বরূপ একটু প্রেমের বীজ হতে 
বেড়িয়ে আসলো পূর্ণ প্রেমের চারা গাছ,
চারা গাছকে তারা দুজনে অনেক আদর করতো, যত্ন নিত,
প্রেমের চারা গাছ ধীরে ধীরে বড় হতে লাগলো।
একদিন একটু ঝড় আসলো,
প্রেমের চারা গাছের সব পাতা ঝরে পড়লো
কঁচি সবুজ প্রেমের ডাল পালা সব ভেঙ্গে গেল।
ঝড় শেষে দেখা গেল, প্রেমের চারা গাছ আর দাঁড়িয়ে নেই
মাটিয়ে চিৎ হয়ে শুয়ে আছে।
ছেলে আর মেয়েটির তখন কিছুই করার ছিল না,
তারা নিজেরাই এই ঝড়কে ডেকেছিল
একটু প্রেমের চারা গাছ ঝড় সহ্য করতে পারেনি,
তাকে মৃত্যুর সাগরে সাঁতরাতে হল।
আসলে প্রেম এমোনি, 
একটুতেই তাকে প্রাণ বলি দিতে হয়।





সিংহ

ইচ্ছে ছিল সিংহ হবো,
মাথা উঁচু করে ঘুড়ে বেড়াবো।
দূর থেকে শিকার খোঁজবো,
যাকে পাবো তাকে ছিঁড়ে খাবো।
আমার ভয়ে সবাই পালাবে,
বনের রাজাকে মান্য করবে।
বন্য হাতি ভয় পাবে,
শিকারী মানব সরে দাঁড়াবে।
আমার ভয়ে দুষ্টু বানর 
নিশ্চুপ রবে গাছের ডালে,
আতংক উড়ে বেড়াবে 
এক ঝাঁক চিত্রা হরিণের পালে।
বনের কুমির সেও লুকাবে 
পুকুরে অথবা কাঁদার খালে,
শিকারের খোঁজে হিংস্র আমি 
হিংস্র রব সকল কালে।

বৃহস্পতিবার, ১০ এপ্রিল, ২০১৪

মৃত স্ত্রী

এই কোথায় তুমি,
বাজারের ব্যাগ টা নিয়ে এসো,
আজকে বাজারে যেতে হবে।
মাছ, দুধ, হলদে-জিরে, পুইশাক, কাঁচা মরিচ
যা যা আনতে হবে তার একটা লিস্ট তৈরি করে দিও।

এই কোথায় তুমি, শোন,
ছেলে-মেয়ের স্কুলে যাবার সময় হল,
ওদের নাস্তা করিয়ে দাও।
ওদের স্কুল ব্যাগে টিফিন বক্স রেখেছো তো।

এই তুমি কোথায়, 
এই দেখো, আমার শার্টের বোতাম ছিড়ে গেছে।
বোতাম টা লাগিয়ে দাও,
তোমার সুঁই-সুতোর বাক্স আমি এনে দিচ্ছি
বল ওটা কোথায় রেখেছো।

এই শোন, এখন মাসের শেষ,
আমার পকেটে টাকাকড়ি নেই।
তোমাকে হিসেব করে খরচ করতে হবে,
আমি কিন্তু তোমাকে এই মাসে
শপিং করার টাকা দিতে পরবো না বলে দিলাম।

এই শোন, কোথায় তুমি,
রান্নাঘরে এত কি কাজ, এদিকে একটু এসো,
তোমার সাথে কথা আছে, আমি আজ দেরিতে বাড়ি ফিরবো।
অফিসে আজকে মিটিং, সাথে অনেক কাজের চাপ।

এই কোথায় তুমি,
বলেছিলে আগামী সাপ্তায় তোমার বান্ধবীর বিয়ে।
বিয়েতে কি উপহার দেবে ঠিক করেছো
শাড়ী নাকি জুয়েলারি, বল কি কিনতে হবে,
অফিস শেষে বাড়ি ফেরার পথে কিনে নিয়ে আসবো কেমন।

এই তুমি কোথায়, 
শোন, আমার অফিস যাবার টাইম হল যে,
আমার রুমাল রেখেছো কোথায়,
আমার ঘড়ি, পায়ের মোজো, কালো ফাইল
এইসব কোথায় রেখেছো,
কিছুই তো খোঁজে পাচ্ছি না।

এই শোন, কোথায় তুমি,
চুপ কেনো তুমি,
এত নিরব কেনো, কথা বল।
এইভাবে কতকাল দেয়ালে ছবি হয়ে থাকবে,
প্লিজ ফিরে এসো আবার,
অগুছালো আমিকে গুছিয়ে দাও আবার।

11:05am 8april

রবিবার, ৬ এপ্রিল, ২০১৪

তুমি হতে বিদায়

বড় অবেলায় এসে ছিলাম আমি,
আর অসময়ে চলে যেতে হল।

"বিদায় ভাল থেকো" 
এই তিন শব্দ বলার সময় হয়নি আমার,
আমি ছিলাম দ্রুততায় মগ্ন।

তুমি বারবার ডাক দিচ্ছিলে আমার নাম ধরে,
তুমি বলছিলে বারবার, ফিরে এসো, যেতে হবে না।

কিন্তু আমি শুনেও না শুনার ভানে সেজেছিলাম,
আমাকে সাজতে হয়েছিল,
বাধ্য হয়ে আমাকে যেতে হয়েছিল,
কারণ নিয়তীর কাছে আমাকে নত হতে হবে।

নিয়তী আমায় অল্প সময় দিয়েছিল বেঁধে,
ইচ্ছে থাকা স্বতের্ও বলে যেতে পারিনি।

লুকিয়ে চোরের মত পালিয়ে গেলাম,
জানি, পালাতে পারি নি আমি,
নিয়তীর কাছে আমায় ধরা দিতে হল।

চাঁদ এবং আমি

আকাশে চাঁদ যেমন একা 
তেমনি আমিও একা,
আকাশে যেমন চাঁদের কাছে
আছে কতগুলো তারকার মিচিল,
তেমনি আমারও পাশে 
আছে অজস্র মানুষের ভিড়,
এই এতগুলো মানুষের ভিড়ে 
আমিও একজন,
ঠিক ঐ চাঁদের মত আমিও নিরব,
আকাশ হতে মাঝে মধ্যে 
চাঁদের পাশের দু-একটা তারা খসে পড়ে,
তেমনি মাঝে মধ্যে 
দু-একজন মানুষ আমার জীবনে আসে,
এসে আবার চলে যায়
ঠিক যেমনটা খসে পড়ে তারকা,
একসময় প্রাকৃতিক নিয়মে ভোর হয়
চাঁদের অস্থিত্ব হয়ে যায় বিলীন,
তেমনি কর্ম-ব্যস্ততায় 
হয়ে যাই আমিও অস্থিত্বহীন।

ভাল থেকো প্রিয় মানুষ

সাত সাগর ও তের নদীর ওপার 
প্রিয় মানুষটির বাস অঞ্চল,
সেখানে সে বেড়েছে, বড় হয়েছে, 
হেসেছে, খেলেছে, চঞ্চল হয়েছে। 
সেখানের বায়ুতে সে মিশ্রিত
তার শ্বাস-প্রশ্বাস মিশ্রিত সেখানকার বায়ু। 
তার পায়ের পদচিহ্ন সেখানের রাস্তায়,
প্রতিটি বাসস্টপে উড়ে বেড়ায় তার ছায়া। 
প্রতিটি ধপধপে সাদা তুষারকণা বলে তার কাহিনী,
বলে তার হাসি-কান্নার কথা।
এক সময় সে থাকতো আমার মন ঘরে
আজো সেখানে সে থাকে। 
তবে সেখানে তার বাসগৃহ আকারে এখন ক্ষুদ্র,
ভালবাসার পরিমাণও হ্রাস পেয়েছে। 
হ্রাসের পরিমাণ এতটাই বেশি
যে তাকে নিয়ে লেখা হয় না এখন,
সেও এখন পড়েনা আমার লেখা, 
ভুলে গিয়েছে হয়ত আমাকে, 
একদিন সুযোগ পেলে আমিও ভুলে যাবো 
প্রিয় সেই মানুষটিকে।

রাতের তারা আমাকে সঙ্গে নিবি

রাতের তারা একটু খাড়া
আমিও আসছি সাথে,
সবাই মিলে বেড়াতে যাবো 
দূর চাঁন্দের দেশে।
চাঁদের বুড়ির বিয়ে লেগেছে
দাওয়াত খাবে সবাই,
একটু খাড়া রাতের তারা
যাবো একসাথে তাই।
না, না, আমার হবেনা দেরি
আমি প্রস্তুত সেজে-গুজে,
চাঁদের বুড়ির বিয়েতে যাবো
নিমন্ত্রণ দিয়েছে সে নিজে।
রাতের তারা, এই তো আমি
এই তো আসছি তোদের সাথে,
আমায় ফেলে একা তোরা
যাস নে নিঘুম রাতে।